চট্টগ্রামে মহিউদ্দিন হত্যা: পুলিশের অভিযোগপত্রে আসামি ৫২
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
চট্টগ্রামে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেল হত্যা মামলায় স্থানীয় কাউন্সিলর সাবের আহাম্মেদ ও জাতীয় পার্টির নেতা ওসমান খানসহ ৫২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান বলেন, সাবের আহাম্মেদ ও ওসমান খানসহ ৫২ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রে মহিউদ্দিন সোহেলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় বলে উলেখ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহির হোসেন জানিয়েছেন, অভিযোগপত্রে ২৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে বিভিন্ন সময় ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি করা হয়েছে ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং পাহাড়তলি রেলওয়ে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহŸায়ক সাবের আহাম্মেদ এবং পাহাড়তলি রেলওয়ে বাজার সমিতির আহŸায়ক কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির নগর কমিটির যুগ্ম আহŸায়ক ওসমান খানকে। দুইজনই বর্তমানে জামিনে আছেন।
অন্য আসামিদের মধ্যে উলেখযোগ্য হলেন- শাহাদাত খান রাসেল, শওকত খান রাজু, শরীফ খান, আবদুর রহমান, সালাউদ্দিন ওরফে রাসেল মির্জা, আবদ্লুাহ আল মামুন ওরফে জুয়েল মির্জা, আজাদ হোসেন, দিদারুল আলম, নুর মোহাম্মদ, মামুন, মাকসুদুর রহমান, মঞ্জুর আলম, আলাউদ্দিন, পারভেজ, বুলবুল আহম্মদ, মোবারাক হোসেন, শরিফুল আলম স্বপন, সাহাবুদ্দিন, রেদোয়ান ফারুক, খাইরুদ্দিন খান, সিরাজ, মো লিটন, মহসীন, ফকির আহম্মদ, আলী ভান্ডারি, আবদুর রশিদ।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক হওয়ার আগে সোহেল এর আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ছিলেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।
মামলার বাদি মহিউদ্দিনের ভাই শাকেরুল উসলাম বলেন, অভিযোগপত্র দিয়েছে শুনেছি। আমরা চাই আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। কিন্তু মূল আসামিরা মুক্ত অবস্থায় বাইরে থাকলে সেটা আমাদের পরিবারের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। আশা করি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এ বছরের ৭ জানুয়ারি প্রকাশ্য দিবালোকে নগরীর পাহাড়তলি রেলওয়ে বাজারে মহিউদ্দিন সোহেলকে হত্যার পর ঘটনাটিকে ‘গণপিটুনি’ বলে দাবি করেছিলেন কাউন্সিলর সাবের আহাম্মেদ ও জাপা নেতা ওসমান খান।
পাশাপাশি পুলিশ জানিয়েছিল, ‘চাঁদাবাজিতে’ অতিষ্ঠ হয়ে বাজারের লোকজন সোহেলকে ‘গণপিটুনি’ দিয়ে মেরে ফেলে। তবে সোহেলের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের বিষয়টিও জানিয়েছিল পুলিশ। তবে ঘটনার পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে সোহেলের পরিবার দাবি করেছিল ‘পরিকল্পিতভাবে’ তাকে হত্যা করা হয়।
৮ জানুয়ারি বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির আহŸায়ক সাবের বলেছিলেন, সোহেল ‘মাদক ব্যবসাও’ করতেন। বিপরীতে সোহেলের পরিবারের দাবি, ওই বাজারে থাকা ওসমান খানের মাদকের আখড়া ভেঙে দিয়েছিলেন সোহেল। সেজন্য তার উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন ওসমান। তার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে সোহেলকে হত্যা করা হয়।
ওই বাজারে আগে ওসমান খানের একটি জুয়ার আড্ডা ছিল বলেও জানিয়েছিলেন কাউন্সিলর সাবের আহাম্মেদ। তবে ঘটনার সাথে নিজের সম্পৃক্ততা তিনি অস্বীকার করেছিলেন।
নিহত সোহেলের ভাই শাকেরুল ইসলাম ৮ জানুয়ারি সাবের আহম্মেদ ও ওসমান খানসহ ২৭ জনের নাম উলেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও দেড়শ জনকে আসামি করে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে মামলা করেন।
২৩ এপ্রিল এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. জাবেদ নগরীর আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠ এলাকায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। কাউন্সিলর সাবের আহম্মেদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জাবেদ পাহাড়তলি বাজারে মহিউদ্দিন সোহেলকে হত্যার সময় ছুরি মেরেছিলেন লে ভিডিও ফুটেজের বরাতে জানিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার জমা দেওয়া অভিযোগপত্র থেকে জাবেদকে বাদ দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া হালিম ও সোহেল নামের দুই আসামির খোঁজ না পাওয়ায় তাদেরও অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়।