November 25, 2024
জাতীয়

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষ

 

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

চট্টগ্রামের প্যারেড মাঠে এক জামায়াত নেতার জানাজা নিয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার বেলা দেড়টা থেকে ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম কলেজ মাঠে (যেটি প্যারেড মাঠ হিসেবে পরিচিত) এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের তিন থেকে চারজন আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে চকবাজার থানার ওসি নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন।

গত শুক্রবার রাতে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় মারা যান জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মুমিনুল হক চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভীর শ্বশুর।

মুমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে রিজিয়া রেজা চৌধুরীকে ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেওয়া হয়। সমালোচনা শুরু হলে তাকে সেই পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। পরে ওই বছরের জুলাই মাসে রিজিয়া রেজা চৌধুরীকে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য করা হলে দলের ভেতর থেকেই তীব্র সমালোচনা হয়।

সেই জামায়াত নেতার জানাজা আয়োজন করা হয় চট্টগ্রাম কলেজ মাঠে শনিবার জোহরের পরে। সেখানে জামায়াত নেতাদের পাশাপাশি ছাত্র শিবিরের কর্মীরাও আসেন। তবে সংসদ সদস্য নদভী শ্বশুরের জানাজায় ছিলেন না।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, জানাজা এবং তাতে শিবিরের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের কথা জানতে পেরে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল নিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে যান। এ সময় জানাজায় থাকা শিবিরের কর্মীরাও এগিয়ে এসে মারামারিতে লিপ্ত হন।

চকবাজার থানার ওসি নিজাম উদ্দিন  বলেন, মমিনুল হক চৌধুরীর জানাজায় কিছু ছেলেপেলে মারমুখী হয়ে ওঠে এবং ছাত্রলীগের ছেলেরা এগিয়ে এলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঝখানে অবস্থান নেয়। এতে কয়েকজন সামান্য আহত হয়ে থাকতে পারেন। তবে বর্তমানে কলেজ ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত আছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মলি­ক সবুজ বলেন, জামায়াতের নেতা মুমিনুল হক চৌধুরীর জানাজা কলেজের মাঠে করার যে অনুমতি প্রশাসন ও কলেজ কর্তৃপক্ষ দিয়েছে সেটা আমরা জানতাম না।

ওই জানাজায় ইসলামী ছাত্র শিবিরের কয়েকশ নেতাকর্মী অংশ নিতে আসে। তাদের মধ্যে নগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আ স ম রায়হান, জুবায়ের ও হান্নানসহ কয়েকজন শিবির ক্যাডার ছিল। তাদের দেখে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দেয়।

তবে জানাজায় অংশ নিতে আসা সাধারণ মুসলি­দের এতে কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানান তিনি। সবুজ বলেন, সাধারণ মুসলি­রা জানাজার নামাজ পড়ে চলে যান। আর আমরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করেছি। মমিনুল হক চৌধুরী চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে একাধিকবার জামায়াতের এমপি প্রার্থী এবং দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ছিলেন।

২০১৪ সালের শুরুতে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের শাহ মঞ্জিলে সিরাতুন্নবী মাহফিলের সমাপনী অনুষ্ঠানে সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন সাংসদ নদভী। অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা দেখা না গেলেও ২০১৪ সালে দলটির মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ হন নদভী।

১৯৮১ সালে নগরীর সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক তবারক হোসেন চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে শিবিরের হাতে খুন হন। এরপর ১৯৮৪ সালে শিবিরের রাজনীতি করতে অসম্মতি জানানোয় খুন হন ইউসুফ নামের এক শিক্ষার্থী।

১৯৮৬ সালে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগের দিন ছাত্রলীগের মিছিলে হামলা চালায় শিবির। এরপর থেকে চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না। ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কলেজে শিবিরের সাথে সংঘর্ষের পর ওই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রকাশ্যে কর্মকাণ্ড শুরু হয়।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *