চট্টগ্রামে চিকিৎসকের আত্মহত্যার ঘটনায় স্ত্রী রিমান্ডে
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
চট্টগ্রামে চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় ‘প্ররোচনার’ মামলায় তার স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত। পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম আল ইমরান খান সোমবার এ আদেশ দেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশর সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী সাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, মিতুকে সাত দিনের রিমান্ডে চেয়েছিল পুলিশ। বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় একজন নারী কন্সটেবলকে সঙ্গে রাখতে এবং হাই কোর্টের সব নির্দেশনা মেনে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
৩২ বছর বয়সী আকাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ‘থ্রি ডক্টারস’ নামে মেডিকেল ভর্তির একটি কোচিং সেন্টার চালাতেন তিনি। তার স্ত্রী মিতু কুমিলা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস শেষ করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ইন্টার্ন করেন। সেখানেই আকাশের সঙ্গে তার পরিচয়, ২০১৬ সালে বিয়ে।
বিয়ের পরপরই উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন মিতু। সেখান থেকে ১৩ জানুয়ারি দেশে ফেরেন তিনি। তার দুই সপ্তাহের মাথায় গত ৩১ জানুয়ারি ভোরে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসায় ইনজেকশনের মাধ্যমে নিজের শরীরে বিষ প্রয়োগ করে আত্মহত্যা করেন আকাশ।
আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে তিনি স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক’ ও ‘প্রতারণার’ অভিযোগ করে যান। এর ‘প্রমাণ’ হিসেবে মিতুর সঙ্গে তার ‘বন্ধুদের’ বেশ কিছু ছবিও তিনি ফেসবুকে তুলে দিয়ে যান আকাশ।
এরপর পুলিশ এক আত্মীয়র বাসা থেকে মিতুকে আটক করে। ১ ফেব্র“য়ারি তাকে হাকিম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আকাশের মা জোবেদা খানম ওইদিনই বন্দরনগরীর চান্দগাঁও থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন।
দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় করা ওই মামলায় মিতু, তার মা শামীম শেলী, বাবা আনিসুল হক চৌধুরী, ছোট বোন সানজিলা হক চৌধুরী আলিশা, যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা প্যাটেল ও ডা. মাহবুবুল আলমকে আসামি করা হয়।
মিতুকে গ্রেপ্তারের পর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ নিয়ে আগে থেকেই দুজনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। মিতু দেশে ফেরার পর তা আরও বেড়ে যায়। বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে এ নিয়ে তাদের হাতাহাতিও হয়।
সেদিন রাতেই মিতুর বাবা এসে আকাশদের বাসা থেকে মেয়েকে নিয়ে যান। ভোরের দিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেন আকাশ। মিজানুর রহমান সেদিন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিতু কিছু কিছু বিষয় আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। আবার কিছু বিষয় এড়িয়ে গেছেন। আকাশ তার পোস্টে মিতুর যেসব ‘বন্ধুর’ নাম বলে গেছেন, তাদের বিষয়েও পুলিশ তদন্ত করবে বলে সেদিন সংবাদ সম্মেলনে জানান অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মিজানুর।
আকাশের মায়ের করা মামলায় মাহবুবুল আলম নামে যে চিকিৎসকের কথা বলা হয়েছে, তিনি কুমিলা মেডিকেলে মিতুর ব্যাচমেট ছিলেন। মাহবুবের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা প্যাটেলেরও নাম আকাশের দেওয়া পোস্টে এসেছে।