চট্টগ্রামের মসজিদে শিশুর ঝুলন্ত লাশ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
চট্টগ্রামে একটি মাদ্রাসার মসজিদ থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যাকে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবারের সন্দেহ। বুধবার রাতে ওয়াজেদিয়া এলাকার ওমর ফারুক আল ইসলামীয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার মসজিদ থেকে লাশটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয় বলে বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি আতাউর রহমান খন্দকার জানান।
মো. হাবিবুর রহমান নামের ১১ বছর বয়সী ছেলেটি ওই মাদ্রাসার হেফজ শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা আনিসুর রহমান পেশায় অটোরিকশা চালক। খাগড়াছড়ির দিঘীনালা উপজেলার মধ্য বোয়ালখালী পশ্চিম পাড়ায় তাদের গ্রামের বাড়ি।
আনিসুর রহমান তার পরিবার নিয়ে বায়েজিদ থানাধীন শের শাহ বাংলা বাজার এলাকায় থাকেন। হাবিবের বড় ভাই মিজানুর রহমানও (১৪) একই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে পড়ে। মাদ্রাসার ছাত্রাবাসেই থাকত দুই ভাই।
ওসি বলেন, মসজিদের চতুর্থ তলা থেকে হাবিবের লাশটি উদ্ধার করা হয়। গলায় কাপড় বাঁধা অবস্থায় তার লাশটি জানালার গ্রিল থেকে ঝুলছিল। পা মাটির সাথে প্রায় লাগানো অবস্থায় ছিল।
ছেলেটির হাঁটুতে পুরানো একটি ক্ষত ছিল জানিয়ে ওসি বলেন, সেখানে পুনরায় আঘাত পাওয়ার লক্ষণ দেখা গেছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।
ওই মসজিদের অন্যান্য তলায় হেফজ শাখার ছাত্ররা পড়াশোনা করলেও চতুর্থ তলা বেশিরভাগ সময় খালি থাকত বলে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পুলিশকে জানিয়েছে।
হাবিবের বাবা আনিসুর বলেন, ছেলেকে ১৩ মাস আগে তিনি ওই হেফজখানায় ভর্তি করান। তিন-চার দিন আগে মাদ্রাসার শিক্ষক মোহাম্মদ তারেক মারধর করলে হাবিব বাসায় চলে যায়। পরে তাকে বুঝিয়ে মাদ্রাসায় ফেরত পাঠানো হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর হাফেজ তারেক ফোন করে আমাকে বলে, হাবিবকে পাওয়া যাচ্ছে না। মাদ্রাসা থেকে এ খবর পাওয়ার পর বাসায় খবর নিয়ে জানতে পারি ও বাসায় যায়নি। পরে রাত ১০টার দিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি আবু দারদা আমাকে ফোন করে বরেন, আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে।
ওই খবর পেয়ে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার গ্রামের বাড়ি থেকে চট্টগ্রামের মাদ্রাসায় এসে ছেলের ঝুলন্ত লাশ দেখার কথা জানান আনিসুর। তিনি বলেন, যে অবস্থায় লাশ ঝোলানো ছিল তা দেখে আত্মহত্যা মনে হয় না। ওর একটা হাত গ্রিলের ভেতরে ছিল, পা মাটির সাথে লাগানো ছিল। বাম হাঁটুতে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে আমি মামলা করব।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার শিক্ষক তারেক বলেন, তিন চারদিন আগে পড়া না পারায় তাকে হালকা মারধর করায় সে বাসায় চলে যায়। পরে আবার মাদ্রাসায় ফিরে আসে। তাকে এরপর আর মারধর করা হয়নি। বুধবার সন্ধ্যায় তাকে না পেয়ে তার ভাইসহ অন্যরা মিলে আমরা খোঁজ করেছি।
ছয়তলা মাদ্রাসা ভবনটির পাশেই চারতলা মসজিদ। মাদ্রাসায় ৩৭৫ জন ছাত্র ও ৮৫ জন ছাত্রী পড়াশোনা করে। হেফজ বিভাগের ৮০ শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই ওই মাদ্রাসার হোস্টেলে থাকে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদ্রাসায় গিয়ে ছাত্রদের চলে যেতে দেখা যায়। আবার অনেক অভিভাবক উদ্বিগ্ন হয়ে তাদের সন্তানদের খুঁজছিলেন।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জানায়, কিছু লোকজন এসে তাদের হোস্টেল ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে বলেছে। তারা কয়েকজন শিক্ষককে মারধরও করেছে। আবার কয়েকজন অভিভাবক বলেন, তাদের সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার জন্য মাদ্রাসা থেকেই ফোন করা হয়েছে। শাহাজাহান নামের এক অভিভাবক বলেন, তার ছেলে ও ভাগ্নে মাদ্রাসায় ‘শিশু নাজাত’ শ্রেণিতে পড়ে।
মাদ্রাসায় ছাত্র মারা যাওয়ার খবর শুনে আমার স্ত্রী সকালে মাদ্রাসার এক শিক্ষককে ফোন করেন। পরিচয় দেওয়ার পর ওই শিক্ষক ফোনের লাইন কেটে দেন। এখানে এসে ভাগ্নেকে মাদ্রাসায় পেলেও ছেলেকে এখনও খুঁজে পাইনি।
ইমদাদ উলাহ নামে মাদ্রাসার এক শিক্ষক অভিযোগ করেন, স্থানীয় কিছু লোক এ মাদ্রাসার বিরোধিতা করে আসছেন আগে থেকেই। ছাত্র মারা যাওয়ার খবর শুনে তারা মাদ্রাসায় এসে শিক্ষকদের মারধর করেছে, শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়েছে।
অন্যদিকে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাতে মাদ্রাসায় ছাত্রের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষকদের অনেকে ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেছেন। ভোরেও বেশ কয়েকজন শিক্ষককে মাদ্রাসা ছাড়তে দেখা গেছে।