November 25, 2024
জাতীয়

ঘূর্ণিভড় বুলবুল : পাঁচ দিন ধরে বিদ্যুৎহীন আড়াই লাখ গ্রাহক

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ জনপদের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন এখনও পুরোপুরি মেরামত করা যায়নি। ফলে পাঁচ দিন ধরে বিদ্যুৎহীন দিন পার করছেন বরিশাল, পিরোজপুর ও বাগেরহাটের আড়াই লাখ গ্রাহক। প্রতি পরিবারের সদস্য সংখ্যা হিসাব করলে দুর্ভোগে থাকা মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে গ্রাহক সংখ্যার চার থেকে পাঁচগুণ বেশি।

পল­ী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বলছে, এসব জেলায় সঞ্চালন লাইন মেরামতের কাজে নিয়োজিত আছে তাদের কয়েক হাজার কর্মী। তারপরও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে আরও কয়েকদিন লেগে যেতে পারে। বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ৯টায় পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। রোববার ভোর ৫টার দিকে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছায়। তবে তার আগেই দমকা বাতাসে ঘরবাড়ি, স্থাপনা ও গাছ-পালার সঙ্গে বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। ঝড়ের বিপদ কাটে রোববার বিকালের পর।

প্রাথমিক হিসাবে পল­ী বিদ্যুতায়ন বোর্ড তখন জানিয়েছিল, উপকূলীয় জেলাগুলোর ৯৫ হাজার কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী ও বরিশালের ২৫ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

এসব এলাকার হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মত জরুরি সেবা কেন্দ্রগুলোতে দ্রুততম সময়ে বিদ্যুত দেওয়ার চেষ্টা করেছেন পল­ী বিদ্যুতের কর্মীরা। কিন্তু অনেক সাধারণ গ্রাহকের কাছে এখনও তারা পৌঁছাতে পারেননি। কেউ কেউ এখন সৌর বিদ্যুতের সাহায্য নিয়ে আপৎকালীন সময় পার করছেন। যাদের সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই তাদের সম্বল কেরোসিনের কুপি আর মোমবাতি।

ঘূর্ণিঝড়ের পর বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোন অপারেটরদের তিন হাজারের বেশি টাওয়ার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপনের পর অনেক টাওয়ার সচল হলেও কিছু এলাকা এখনও মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে রয়ে গেছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক ফিরলেও অনেকের হাতের মোবাইল ফোনটি বন্ধ হয়ে আছে চার্জ দিতে না পারার কারণে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে ব্রয়লার মুরগির খাবারসহ গ্রামাঞ্চেলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোগুলো।

পল­ী বিদ্যুতের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী অঞ্জন কান্তি দাশ বলেন, পটুয়াখালী ও বরগুনায় সঞ্চালন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা গেলেও বরিশাল, পিরোজপুর ও বাগেরহাটের পরিস্থিতি এখনও নাজুক। বাগেরহাটে দুই লাখ ৭৩ হাজার, বরিশালে সাড়ে চার লাখ এবং পিরোজপুরে তিন লাখ ৭২ হাজার গ্রাহক রয়েছে পল­ী বিদ্যুতের।

অঞ্জন বলেন, ঝড়ে গাছ পড়ে হাজার হাজার বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। তার ছিঁড়ে ছিন্ন ভিন্ন অবস্থা। গাছ ভেঙে পড়ার কারণে অনেক এলাকায় সড়ক যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন। গত পাঁচ বছর ধরে আমরা যে সঞ্চালন লাইন করেছিলাম তার বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, রাস্তায় হেলে পড়া গাছ কাটতে কাটতেই সময় পার হয়ে যাচ্ছে। কখন ক্ষতিগ্রস্ত কোন এলাকায় যাব, আর কখন মেরামত শুরু করব সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।

পল­ী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল, পিরোজপুর ও বাগেরহাটের আড়াই লাখ গ্রাহক বৃহস্পতিবার রাতেও অন্ধকারে ছিলেন। মেরামতের অপেক্ষায় আছে আরও ১৫ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন।

পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের কালিকাটি গ্রামের ফারজানা খানম জানান, ঝড়ের পর থেকেই তার এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুতের অভাবে তার পোল্ট্রি খামারের শোচনীয় অবস্থা। পল­ী বিদ্যুৎ থেকে বলেছে, বিদ্যুতের লাইন যেরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা সর্বোচ্চ গতি নিয়ে মেরামত করলেও আরও ৪/৫ দিন সময় লেগে যেতে পারে।

পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ ফিরে এলেও গ্রামাঞ্চলে এখনও অধিকাংশ লাইন মেরামতের অপেক্ষায়। মানুষ রাত কাটাচ্ছে অন্ধকারে। পাম্প দিয়ে পানি তোলার উপায় নেই। মোবাইল ফোনে চার্জ দেওয়ারও উপায় নেই। অনেক জায়গায় ছোট আকারের জেনারেটর চালু করে মোবাইল প্রতি ২০ টাকায় চার্জের ব্যবস্থা করেছে।

বরিশাল পল­ী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জিএম একরামুল হক জানান, ঝড়ে তার জেলার প্রায় ৪০০ খুঁটি ভেঙে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় ৩৩ কেভির লাইন ছিঁড়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে কিছু সংযোগ দেওয়া হয়েছে, আরও কিছু সংযোগ দেওয়ার বাকি।

মুলাদি উপজেলার বাসিন্দা গোলাম কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আগের রাতেই বিদ্যুৎ চলে গেছে। এখন আসেনি। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ আসবে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করতে পারছে না। মোমবাতি ও কুপি জ্বালিয়ে তারা রাত পার করছেন। সা¤প্রতিক সময়ে বরিশাল এলাকায় এমন পরিস্থিতি আর হয়নি বলে জানান কবির।

 

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *