ঘূর্ণিঝড় আম্পান: আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হবে মঙ্গলবার বিকাল থেকে
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় মঙ্গলবার বিকাল থেকে উপকূলের নিচু ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের মঙ্গলবার বিকাল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া শুরু করবে সরকার।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল সোমবার দুপুরে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার শেষরাত থেকে বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
“পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমরা মঙ্গলবার বিকাল থেকে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া শুরু করব।”
স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করেছে জানিয়ে শাহ কামাল বলেন, “গর্ভবর্তী নারী, মহিলা, প্রতিবন্ধী ও শিশুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হবে। এরপর অন্যদের নেওয়া হবে। ইফতারের পর থেকে পুরুষদের নেওয়া হবে। তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করা হবে।”
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ আসায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান ত্রাণ সচিব।
তিনি বলেন, একেকটি পরিবারের সদস্যরা যাতে একসাথে থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হবে।
“সরকারের পাঁচ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে ২১ লাখের মত মানুষকে রাখা যায়। এখন আমরা ওইসব এলাকার সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে নিয়েছি। ফলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখতে কোনো সমস্যা হবে না।”
আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করে সোমবার বিকাল ৫টার মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে জেলা প্রশাসনগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান সচিব শাহ কামাল।
“চট্টগ্রামে ৩৯৯৮টি এবং পটুয়াখালীতে ৭২২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে বলে সোমবার সকালে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। উপকূলীয় অন্যান্য জেলায় কতগুলো করে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে সোমবার বিকেলের মধ্যেই তা জানা যাবে।”
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, সোমবার বেলা ১২টায় ‘আম্পান’ অবস্থান করছিল পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায়।
সে সময় এ ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১১১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, আম্পান আরও শক্তিশালী হয়ে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে, তখন এর বাতাসের গতি ঘণ্টায় ২৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। তবে উপকূলে পৌঁছনোর আগে সামান্য কমে আসতে পারে এর শক্তি।
বুধবার বিকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে আম্পান পশ্চিমবঙ্গের দীঘা এবং বাংলাদেশের হাতিয়ার মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ।
তবে বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদদের ধারণা, মঙ্গলবার শেষরাত থেকে বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড় আম্পান।
এদিকে মাঠে পেকে যাওয়া বোরো ধান যাতে ঝড়-বৃষ্টিতে নষ্ট না হয়, সেজন্য দুর্যোগ শুরুর আগেই তা কেটে কৃষকের ঘরে তুলতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে সেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় মাঠে থাকা ধান কেটে কৃষকের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জোর চেষ্টা চলছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ।