ঘুষের মামলায় বাছির-মিজানের বিচার শুরু
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির এবং পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ কেলেঙ্কারির মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১৮ মার্চ) ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ শেখ নাজমুল আলম এই আদেশ দেন। আদালত এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৩ মার্চ দিন ধার্য করেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এবং আসামিপক্ষে সৈয়দ রেজাউর রহমান ও এহসানুল হক সমাজী শুনানি করেন। পরে দুদক কৌশলী মোশাররফ হোসেন কাজল বাংলানিউজকে এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, তাদের মধ্যে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মামলায় ১৭ জন সাক্ষী আছেন, যার মধ্যে তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী। তাছাড়া আলামত হিসেবে তাদের মধ্যকার মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড আছে। আমরা বিষয়গুলো আদালতকে বলেছি। সবকিছু শুনে আদালত মামলাটি বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন।
গত ৪ মার্চ এই মামলার অভিযোগ গঠন শুনানি শুরু হয়। তিন কার্যদিবস শুনানি শেষে আদালত অভিযোগ গঠনের আদেশ দিলেন। এ সময় বাছির ও মিজান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৯ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লা অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মামলাটি চার নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বদলির আদেশ দেন।
গত ১৬ জুলাই দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্লা মানি লন্ডারিং আইনে সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। ৪০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পর দুদক পরিচালকের পদ থেকে খন্দকার এনামুল বাছির ও পুলিশের ডিআইজির পদ থেকে মিজানুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
গত ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান। ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলেন মিজান। ডিআইজি মিজানও এ বিষয়ে নিজেই গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে ডিআইজি মিজান দাবি করেন।
এ প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং কমিটি ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকাকে জোর করে বিয়ে করার সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। ওই ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরসহ দুদকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে বিতর্কিত ডিআইজি মিজানকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। পরে ২৫ জুন তাকে সাময়িক বরখাস্তের কথা সাংবাদিকদের জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
গত বছর ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেফতার করে দুদকের একটি দল। সেই থেকে তিনি কারাগারে। অপরদিকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার ডিআইজি মিজানকে এই মামলায়ও গ্রেফতার দেখানো হয়।