গ্যাটকো দুর্নীতি: আদালতে বসার জায়গা নিয়ে খালেদার ক্ষোভ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
পায়ে ফোঁড়ার ব্যথা সারার পর গ্যাটকো মামলার শুনানিতে হাজির হয়ে বসার জায়গা নিয়ে আপত্তি তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এজলাসের ভেতরে পেশকারের পেছনে যে জায়গায় তাকে বসানো হয়েছিল,সেখান থেকে বিচারককে দেখা না যাওয়ায় ক্ষুব্ধ খালেদা বলেন, আমি এখানে থাকব না। আমি এখান থেকে চলে যাব।
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজা নিয়ে গত বছরের ফেব্র“য়ারি থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে আছেন বিএনপিনেত্রী খালেদা। তার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচার কারাগারের ভেতরে অস্থায়ী এজলাসে হলেও গ্যাটকো মামলা চলছে বকশীবাজারে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে।
বৃহস্পতিবার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও আসামিপক্ষ মামলার নথি চেয়ে আবেদন করলে বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন শুনানি পিছিয়ে দেন। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারী এ মামলার পরবর্তী তারিখ রেখেছেন তিনি।
এর আগে বেলা সাড়ে ১২টার পর হুইলচেয়ারে করে আদালতে আসেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এজলাসের বাঁ পাশে পেশকারের পেছনে দেয়াল ঘেরা একটি জায়গায় তাকে বসানো হয়।
খালেদার অন্যতম আইনজীবী নূরুজ্জামান তপন বলেন, ওই জায়গায় বসে শুনানি দেখতে সমস্যা হওয়ায় আপত্তি জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। বিচারকের উদ্দেশে খালেদা বলেন, আমি এখান থেকে আপনাকে কিছুই দেখতে পারছি না। আমাকে আদালতে (কাঠগড়ায়) ঢোকাতে চাচ্ছেন? এতে আমি রাজি আছি।
ঘেরাওয়ের মধ্যে বসানোর কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে খালেদা বলেন, এর আগে তো এখানে দেয়াল ছিল না। আমি এখান থেকে কিছুই দেখতে পারছি না। খালেদার আইনজীবীদের মধ্যে এ সময় আদালতে ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী, মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার ও আমিনুল ইসলাম।
এ জে মোহাম্মদ আলী বিচারককে বলেন, কেন তাকে পৃথক করছেন। আপনি সিদ্ধান্ত দিয়ে তাকে সামনে নিয়ে আসেন। তাকে পৃথক রাখার কোনো সুযোগ নেই।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এ সময় বলেন, আদালত তো এইভাবে নির্মিত। নিরাপত্তা স্বার্থে তাকে ওই জায়গায় রাখা হয়েছে। বিচারক পরে বলেন, আমি তো আজ নতুন। বিষয়টা আমি দেখব। আজ এখানেই থাকুক।
এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি পায়ে ফোঁড়া ওঠায় খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির না করায় গ্যাটকো মামলার শুনানি পিছিয়ে যায়। দুদকের উপ-পরিচালক মো. গোলাম শাহরিয়ার ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১৩ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. জহিরুল হুদা। চার দলীয় জোট সরকারের নয় মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীসহ মোট ২৪ জনকে সেখানে আসামি করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন।
আসামিদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, এম শামছুল ইসলাম, এমকে আনোয়ার, আকবর হোসেন, আব্দুল মান্নান ভুইয়া এবং খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রাহমান কোকো মারা গেছেন। আর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
মামলার অপর আসামিরা হলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, আকবর হোসেনর স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং একেএম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, প্রাক্তন নৌ সচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রাক্তন সদস্য একে রশিদ উদ্দিন আহমেদ, গ্লোবাল এগ্রোট্রেড প্রাইভেট লি. (গ্যাটকো) এর পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, প্রাক্তন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও প্রাক্তন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন।