গিলাতলায় বেড়েছে মাদকের ‘হোম ডেলিভারি’
ফুলবাড়ীগেট প্রতিনিধি
মাদকের আখড়া হিসেবে খানজাহান আলী থানার ১নং আটরা গিলাতলা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের গিলাতলা দক্ষিণপাড়া এলাকার কুখ্যাতি রয়েছে। খুলনার বিভিন্ন এলাকায় জোরদার মাদকবিরোধী অভিযানের সময় এসব এলাকায় অভিযান চালানো হয়। তারপরও অনেকটা প্রকাশ্যে চলছে মাদক ব্যবসা। সর্বশেষ কঠোর বিধি-নিষেধের আড়ালে মাদক ব্যবসায়ীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ফাঁকি দিতে মাদক বিক্রির সময় আর স্পট বদলে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে গিলাতলা এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রির চেয়ে বেড়েছে হোম ডেলিভারি। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেল এসব তথ্য।
কেএমপির দৌলতপুর জোনের সহকারি কমিশনার অমিত বর্ধন বলেন, কোনোভাবেই যেন মাদক ব্যবসা চলতে না পারে, সে ব্যাপারে পুলিশ কমিশনারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি কেউ কোনো তথ্য জানালে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দায়িত্বরত কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ ওঠে তাকেও তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফুলবাড়ীগেট কুয়েট রোডের চারপাশেই নানারকম দোকানপাট। ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় প্রচুর অলিগলি। সেগুলোতেও অনেক দোকান। প্রচুর লোকজনের আনাগোনা। এমন ভিড়ের মধ্যেই কিছু স্থানে চলছে ইয়াবা ও গাঁজা বেচাকেনা। বিশেষ করে রেল লাইন সংলগ্ন বস্তিগুলোতে ছোট বড় মাদকের আখড়া গড়ে ওঠেছে। এর বাইরে মিরেরডাঙ্গা টিবি হাসপাতাল রোড, শিরোমনি পুরাতন চেকপোষ্ট, গিলাতলা গাজীপাড়া, মশিয়ালি মিনা বাজার তেমনই একটি স্পট।
স্থানীয় এক যুবককে সঙ্গে নিয়ে ওই এলাকায় গিয়ে আলো-আঁধারির মধ্যে কয়েকজনকে মাদক বিকিকিনি করতে দেখা গেল। এই প্রতিবেদককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একজন এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী লাগবে?’ তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পর সঙ্গে থাকা যুবক জানালেন, মাদক বিক্রেতারা এভাবেই জিজ্ঞেস করে। অনুসন্ধানে জানা গেলে এ সব মাদক স্পট বর্তমানে যারা পরিচালনা করছে তারা এর আগে একাধিকবার থানা পুলিশের হাতে আটক হলেও পুনরায় জেল থেকে বেরিয়ে এসে মাদক কেনা বেচার সাথে জড়িয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রতিদিন এসব স্পট থেকে বিভিন্ন ক্রেতার কাছে মাদক সরবরাহ করা হচ্ছে। পরিচিত ক্রেতারা ফোনে অর্ডার দিয়েছে, সেই অনুযায়ী তাদের দেওয়া ঠিকানায় মাদক পৌঁছে দিয়ে আসবে বিক্রেতারা। এর জন্য টাকা কিছুটা বেশি নেওয়া হয়। এদিকে ইস্টার্ন গেট মিম ফিলিং ষ্টেশন ও ইস্টার্নগেট আমতলা খেয়াঘাট সংলগ্ন বাগানে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যাবসা বন্দ থাকলেও পুনরায় সেটা চালু হয়েছে, বিকালের পর বিভিন্ন স্থান থেকে অপরিচিত লোকজন এর মটরসাইকেলে আনাগোনা চলে গভির রাত পর্যন্ত এসব এলাকায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে এখন ভোর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত মাদক বেচাকেনার নতুন সময় বেছে নিয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে ১০/ ১৬ বছরের কিশোররা মাদক ব্যাবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও থাকে না। অবশ্য সন্ধ্যায়ও বিকিকিনি হয়। আবার স্পটগুলো বিভিন্ন জনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তারা সব সময় এক স্পটে থাকে না। বিভিন্ন সময় সুবিধাজনক পয়েন্টে তারা মাদক বিক্রি করে। ফলে মাদকের স্পটও বদলে গেছে। তবে বর্তমানে থানা এলাকার গিলাতলা দক্ষিণপাড়ার মাদকস্পটটিতে কৌশলে বিপুল পরিমাণ মাদক পাইকাড়ী ও খুচরা কেনাবেচা হলেও রহস্যজনক কারণে সেই মাদকের বড় ডিলার থেকে যাচ্ছে ধরাছোয়ার বাইরে।
এদিকে মাদক ব্যবসায়ীরা এখন আগের চেয়ে সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। তারা জানান, মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় বিভিন্ন সময়ে নিরিহ লোকদের ওপর পাল্টা হামলা ও হয়রানি করা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়