গাজীপুরে স্পিনিং মিলে অগ্নিকাণ্ডে নিহত বেড়ে ৬
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার অটো স্পিনিং লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় জনে। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখতে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার দুপুরে ওই কারখানায় আগুন লাগার পর টয়লেটে আটকা পড়া এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়। এরপর বুধবার ভোর ৪টার দিকে কারখানার ধ্বংসস্তূপ থেকে তিনটি পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর দুপুরে পাওয়া যায় আরও দুটি লাশ।
উপজেলার নয়নপুরের ফরিদপুর এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ওই স্পিনিং মিলের তুলার গুদামে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৮টি ইউনিট প্রায় ১১ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর কর্মীরা কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে ডাম্পিং শুরু করেন।
শ্রীপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা রাম প্রসাদ পাল জানান, রাসেল (৩৫) নামে এক নিরাপত্তাকর্মী অগ্নিকাণ্ডের সময় গুদামের ভেতরে টয়লেটে আটকা পড়েন। ধোঁয়া ও আগুনের মধ্যে চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু বিকালে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ভোর রাতে কারখানার ভেতরে তিনটি পোড়া লাশ পাওয়া যায় জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান বলেন, সেগুলো পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে।
এই তিনজন হলেন- শ্রীপুর উপজেলার দক্ষিণ দুয়ার জয়নাল আবেদীনের ছেলে আনোয়ার হোসেন (২৮), হাসান আলীর ছেলে মো. শাহ জালাল (২৮) এবং কালিয়াকৈরের ভান্নারা মৌচাক এলাকার শামসুল হকের ছেলে সেলিম মিয়া (৩৫)।
শাহজালালের ভগ্নিপতি ইমরান জানান, দুপুরে শাহজালাল কারখানার যে ঘরে কাজ করছিলেন, তার পাশের ঘরে তার পোড়া লাশ পাওয়া যায়।
আনোয়ারের চাচাতো ভাই সজীব জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে তারা মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন।কিন্তু আনোয়ার ফোন ধরেননি। ঘণ্টা দেড়েক পর ফোনটাও বন্ধ পাওয়া যায়। ভোরে তিনজনের পোড়া লাশ উদ্ধারের পর মুখের দাড়ি দেখে আনোয়ারকে শনাক্ত করা হয় বলে জানান সজীব।
শ্রীপুর থানার ওসি লিয়াকত আলী জানান, ডাম্পিংয়ের কাজের মধ্যেই বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে কারখানার এসি প্ল্যান্ট থেকে আরও দুটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
তারা হলেন- পাবনা জেলার আমিনপুরের নান্দিয়ারা গ্রামের কেরামত সরদারের ছেলে সুজন সরদার (৩০) এবং ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের ভুবনপোড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মো. আবু রায়হান (৩৫)। তারা দুজনই কারখানার এসি প্ল্যান্টে কর্মরত ছিলেন।
অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় গুদামে থাকা তুলা ও অন্যান্য মালামাল পুড়ে গেছে। তবে আগুন লাগার কারণ বা ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ জানা যায়নি। অটো স্পিনিং লিমিটেডে অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখতে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীনুর ইসলামকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের উপ-পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, শ্রীপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, গাজীপুরের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক এবং গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন। জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন।