গাজীপুরে বেতনের দাবিতে পোশাক শ্রমিকের বিক্ষোভ, অবরোধ
গাজীপুরে কয়েকটি পোশাক কারখানায় বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছে শ্রমিকরা।
রোববার সকালে অবরোধের ফলে মহাসড়কে কিছু সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ গেলে এবং কর্তৃপক্ষ বেতন দেওয়ার ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা চলে যায়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে গাজীপুর জেলা অবরুদ্ধ করা হয়েছে ইতোমধ্যে। কয়েকটি ছাড়া এখানকার কলকারখানাও বন্ধ রয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সদর উপজেলার ভবানীপুরের ট্রাস্ট নিটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা মার্চের বেতন না দিয়ে ছাঁটাই করার খবরে সকাল ৯টার দিকে বিক্ষোভ শুরু করে।
“খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে মালিকপক্ষ কাউকে ছাঁটাই না করে ১৬ এপ্রিল বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা চলে যায়।”কারখানার শ্রমিক মো. জোবায়ের বলেন, তাদের অনেক সহকর্মীর বেতন না দিইে ছাঁটাই করা হচ্ছে। এ খবর পেয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জালাল উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মহানগরীর ভোগড়া চৌধুরীবাড়ির স্টাইলিস্ট, ভেলমন্ট ও নিউওয়েস্ট ফ্যাশনস লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা মার্চের বকেয়া বেতনের জন্য বিক্ষোভ শুরু করে। “এক পর্যায়ে তারা পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ-মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের আলোচনা করে ১৬ এপ্রিল বকেয়া বেতন প্রদানের ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা চলে যায়।”
নিউওয়েস্ট ফ্যাশন লিমিটেডের নিটিং অপারেটর শাহিনা বেগম বলেন, তারা দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। কারখানা কর্তৃপক্ষ দেই দিচ্ছি করে ঘোরাচ্ছে।“এখন আমাদের ঘরে খাবার নেই। বাড়িভাড়া ও দোকানবাকি পড়ে আছে। পাওনাদারদের জন্য বাসা থেকে বের হতে পারছি না। এর মধ্যে গাজীপুর ‘লকডাউন’ করা হয়েছে। এখন আমাদের না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, সরকার যে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে তা কেবল যারা স্থানীয় ও গাজীপুরের যারা ভোটার তারা পাচ্ছেন। অন্যরা কেউ ত্রাণ পাচ্ছে না।
“আমরা যারা বাইরের যানবাহন বন্ধ থাকায় সন্তানদের গ্রামের বাড়িতেও রেখে আসতে পারছি না। এখন বেতন না পেলে সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে মরব।”গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার বলেন, গাজীপুর মহানগরীর সাইনবোর্ড এলাকায় ঈস্ট ওয়েস্ট গ্রুপের চার সহস্রাধিক পোশাক শ্রমিকের ফেব্রুয়ারির আংশিক ও মার্চের বেতন বকেয়া রয়েছে। সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকরা তাদের পাওনার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে।
“পরে মালিকপক্ষ ১৬ এপ্রিল বেতন পরিশোধের ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেয়।”
এই কারখানার শ্রমিক সুমনা বলেন, তাদের ফেব্রুয়ারি ও মার্চের বেতন বকেয়া রয়েছে। মালিক কোনো মাসেই পুরো বেতন দেয় না। তারা কয়েক কিস্তিতে বেতন পরিশোধ করে। বেতন না পাওয়ায় তারা খুবই সমস্যার মধ্যে রয়েছেন।“দোকানবাকি ও বাড়িভাড়ার জন্য বারবার তাগিদ শুনতে হচ্ছে। এখন আর কেউ বাকি দেয় না। বাড়িওয়ালাও ভাড়া দিয়ে বাসা ছেড়ে চলে যেতে বলছে।”
টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি মো. এমদাদ জানান, এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে জেলায় অবরুদ্ধ অবস্থা চলাকালেও বেতন বকেয়া রেখে কিছু কিছু পোশাক কারখানা পিপিই ও মাস্ক তৈরির অজুহাতে চালু রেখেছে।
“তারা সরকারি সিদ্ধান্তের অজুহাত দিয়ে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলে কারখানা চালু রাখলেরও বাস্তব চিত্র উল্টো। এদের কিছু কারখানা বেতন না দেওয়ায় বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক অসন্তোষ হচ্ছে।”ওসি এমদাদ বলেন, বেতনের জন্য পোশাক শ্রমিকরা কারখানায় এবং রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে। নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব মেনে না চলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি জানান, অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হলেও তার থানাধীন সাতাইশ এলাকার রক এন্ড রোল এপারেলস, ক্লাসিক ফ্যাশন, তিলারগাতি এলাকার ট্রাউজার ল্যান্ড, বড়দেওড়া এলাকার জয়নাল নীট কম্পোজিটসহ পাঁচটি কারখানা চালু রয়েছে।