গাজীপুরে পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যু
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর গাজীপুর নগরীতে ‘মাদক মামলার আসামি’ এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ভাওয়াল গাজীপুরের বাড়ি থেকে তাকে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। রাতে স্বজনরা তাকে হাসপাতালে মৃত দেখতে পান। মৃত ইয়াসমিন বেগম (৪০) ভাওয়াল গাজীপুর গ্রামের আব্দুল হাইয়ের স্ত্রী। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
ইয়াসমিন বেগমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বজনদের অভিযোগ। তবে পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, ওই নারী হৃদরোগী ছিলেন। এদিকে, এ ঘটনা তদন্তে মহানগর পুলিশ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।
ইয়াসমিনের ছেলে আরাফাত রহমান জিসান সাংবাদিকদের বলেন, তার বাবা আব্দুল হাইকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মহানগর ডিবি পুলিশের এএসআই নুরে আলমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাদের বাড়ি যায়। কিন্তু বাবাকে না পেয়ে কলাপসিবল গেইট ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে তার আমার মাকে চড়-থাপ্পর মারে এবং ধরে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, পরে তিনি তার মার মোবাইলে ফোন দিলে ডিবির সদস্যরা তাকে ডিবি অফিসে যেতে বলেন। কিছুক্ষণ পর পুলিশ আমাকে ডিবি অফিসে না গিয়ে হাসপাতালে যেতে বলে। হাসপাতালে গেলে পুলিশ আমাকে ভেতরে যেতে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে তারা জানায়, আমার মা মারা গেছেন। জিসান আরও বলেন, মোবাইলে কথা বলার সময় আমি মাকে মারধরের আওয়াজ শুনেছি। পুলিশ আমার মাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মনজুর রহমান পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইয়াসমিনের ভাওয়াল গাজীপুরের বাড়িতে মাদক বেচা-কেনা হচ্ছে খবর পেয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেখানে অভিযান চালানো হয়। পরে মাদক মামলার আসামি ইয়মিনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার হেফাজত থেকে ১০০টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা। এ সময় তার মাদক ব্যবসায়ী স্বামী পালিয়ে যায়।
উপ-কমিশনার মনজুর আরও বলেন, গ্রেপ্তারের পর ইয়াসমিনকে গোয়েন্দা অফিসে নিলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পরীক্ষা নিরীরক্ষার পর চিকিৎসকরা ইয়াসমিনকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। তাকে ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতিাকালে ইয়াসমিন মারা যান। ইয়াসমিন ও তার স্বামী আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান মনজুর।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ১০টা ১০ মিনিটে ইয়াসমিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় তার বুকে ব্যথা ও প্রচÐ শ্বসকষ্ট ছিল। পরে তার ইসিজি করা হয়।
পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে রাত ১১টা ২০ মিনিটে তিনি মারা যান। হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তার শরীরে বাহ্যিকভাবে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপ-কমিশনার মনজুর জানান, এ ঘটনা তদন্তে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন। তাদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে মনজুর জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আজাদ মিয়ার নেতৃত্বে কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আব্দুল হামিদ ও সহকারী কমিশনার (এসি) আহসান হাবিব।