January 21, 2025
জাতীয়

গাজীপুরের “ফোর মার্ডার” কেসে আসামি আটক

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার গ্রামের জৈনাবাজার এলাকায় প্রবাসীর স্ত্রী ও তিন সন্তানকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় পারভেজ (২০) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতার পারভেজ আবদার গ্রামের কাজিম উদ্দিনের ছেলে।

রোববার (২৭ এপ্রিল) রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান গাজীপুর জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান। এ সময় পারভেজের ঘর থেকে তার দেখানো মতে রক্তমাখা কাপড় ও মাটির নিচে চাপা দেয়া অবস্থায় মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

এদিকে আবদার এলাকার একই পরিবারের চারজনকে হত্যার আগে ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নীলিমা নামে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে পারভেজ হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় পারভেজের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। বয়স বিবেচনায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে মুক্ত হন পারভেজ।

জামিনের মুক্ত হওয়ার পর শিশু নীলিমার পরিবারকে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি দিতে থাকেন তিনি। মামলা প্রত্যাহার না করা হলে তাদের মারপিট করে এলাকা ছাড়া করবে বলেও জানান পারভেজ ও তার পরিবারের সদস্যরা। এ বিষয়ে ২০১৮ সালে ২৮ আগস্ট নিরাপত্তা চেয়ে পারভেজ, তার বাবা কাজিম উদ্দিন, মা মোছা. কামরুন্নাহার ও আবুল কালামের নাম উল্লেখ করে শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিশু নীলিমার বাবা হাসান ওরফে ফালান।

আবদার এলাকার প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ও তিন সন্তানকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার পারভেজ এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। মাদকসেবন থেকে শুরু করে বেচাকেনার সঙ্গেও তার সম্পর্ক রয়েছে। মাদক সম্পৃক্ততা ও বখাটে আচরণের কারণে স্থানীয় লোকজন তাকে এড়িয়ে চলতো বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দা হারুন অর রশিদ। পরিবারের সদস্যরা অনেক চেষ্টা করেও তাকে ভালো পথে আনতে পারেননি বলে জানান। অবশেষে ফোর মার্ডার মামলায় পিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়লো পারভেজ।

পারভেজের চাচা আসাম উদ্দিন বলেন, পারভেজ অনেক আগে থেকেই মাদক সেবন ও বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত। টাকার জোরে একটি মার্ডার মামলা থেকে পারভেজ পার পেয়ে যায়। তখন যদি সে ওই মামলা পার না পেতো তাহলে এমন রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটনোর সাহস পেত না।

গাজীপুর জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান বলেন, পারভেজের একার পক্ষে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটনো কোনো মতেই সম্ভব নয়। মামলার শুরুতেই ভিন্ন আঙ্গিকে তদন্ত শুরু করে পিবিআই। পূর্বের বিভিন্ন ধরনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা, এলাকার বখাটে, মাদক সেবনকারি ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন জনের তথ্য সংগ্রহ করে পিবিআই। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে রোববার রাতে পারভেজকে আবদার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব স্বীকার করে। পরে তাকে নিয়ে অভিযানে বের হয় পিবিআই। এ সময় পারভেজের ঘর থেকে তার দেখানো মতে রক্তমাখা কাপড় ও মাটির নিচে চাপা দেয়া অবস্থায় মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এ সময় একটি পায়জামার ভেতর থেকে তিনটি গলার চেইন, ফাতেমার কানের দুলসহ কিছু স্বর্ণলংকার উদ্ধার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকার একটি বাড়ি থেকে মা ও তিন সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা- বুধবার (২২ এপ্রিল) দিবাগত রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা চারজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে।

নিহতরা হলেন- আবদার এলাকার প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক স্মৃতি আক্তার ফাতেমা (৪৫), তার বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬) , ছোট মেয়ে হাওরিন হাওয়া (১২) ও বাক প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিল (৮)।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *