গাইবান্ধায় নদ-নদীগুলোতে হুহু করে বাড়ছে পানি
গাইবান্ধায় নদ-নদীগুলোতে হুহু করে বাড়ছে পানি। দিনদিনে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। এতে প্রায় পৌনে এক লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এসব মানুষদের বেড়েছে দুর্ভোগ।
বুধবার (২২ জুন) সকাল ৯টায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোলরুম থেকে জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদের পানি সদর পয়েন্টের ৪২ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া করতোয়ার পানি চক রহিমাপুর পয়েন্টে ১১৩ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা যায়, গাইবান্ধা জেলার ৪ উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া ইউনিয়নের ভূসির ভিটা, উত্তর উড়িয়া, রতনপুর, কালাসোনা, ফজলুপুর ইউনিয়নের পূর্ব খাটিয়ামারী, পশ্চিম খাটিয়ামারী, মধ্য খাটিয়ামারী ও সদর উপজেলার কামারজানি, মোল্লাচর, কুন্দেরপাড়া এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়নের হরিপুর,কাপাসিয়া, বেলকা ও সাঘাটা উপজেলার কানাইপাড়া, কুমারপাড়া, দক্ষিণ দীঘকান্দি, সিপি গাড়ামারাসহ আরও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ৪ উপজেলার পৌনে এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় ওইসব প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন রাস্তা-বাঁধে দেখা দিয়েছে ভাঙন। বন্যাকবলিত ওইসব এলাকার কৃষি ফসল নষ্ট হওয়াসহ যোগযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে সাদুল্লাপুর উপজেলার ঘাঘট নদে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এখানেও দেখা দিয়ে বন্যার আশঙ্কা।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে নদী তীরের মানুষ। নদীর পানি বৃদ্ধি ও ভাঙনে কেউ কেউ আশ্রয় নিতে শুরু করছে বাঁধ ও স্বজনদের বাড়িতে। ইতোমধ্যে প্রায় ২০ আশ্রয়কেন্দ্রে ২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
পানির চাপে কয়েকটি বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। বন্যা দুর্গত পরিবারে বিশুদ্ধ পানিসহ খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। তারা ত্রাণসামগ্রীর জন্য বিভিন্ন দিকে ছুটাছুটি করছে।
এদিকে, জেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ে পানি জমে থাকার কারণে ১২৬ প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, আরও কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। নদ-নদী ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা ও ভাঙন কবলিত স্থানগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং কোনো কোনো স্থানে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে ।
গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুর্ণবাসন কর্মকর্তা এসএম ফয়েজ উদ্দিন জানান, বন্যার্ত মানুষদের জন্য ৮০ মেট্রিকটন জিআর চাল ও নগদ ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক (ডিসি) অলিউর রহমান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুদ রয়েছে। এসব সামগ্রী দুর্গত মানুষের মাঝে বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।