গরুর লাম্পি স্কিন রোগে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ
গরুর ‘লাম্পি স্কিন’ রোগ চট্টগ্রামের খামারগুলোতে ছড়িয়ে পড়লেও এতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলেছেন, খুব সাধারণ চিকিৎসায় গবাদি পশুর এই রোগ সারানো সম্ভব।
গত জুলাই মাসে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার একটি খামারের গরুতে প্রথমবারের মতো দেখা দেয় লাম্পি স্কিন রোগ। পরবর্তীতে এ রোগ বিভিন্ন খামারে ছড়িয়ে পড়লে খামারিদের মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক।
চট্টগ্রাম জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১৬৫৫টি গরুর খামার রয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসেব অনুযায়ী, চট্টগ্রামের ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মতো খামারের গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর বাইরে বাড়িতে পালন করা গরুতেও এ রোগ ছড়িয়েছে।
তবে খামার মালিকদের দাবি, আক্রান্ত গরুর সংখ্যা আরও বেশি।
কর্ণফুলী, সীতাকুণ্ড ও বাঁশখালী উপজেলায় গরুর খামার বেশি এবং ওই সব এলাকার খামারগুলোতে লাম্পি স্কিন রোগের সংক্রমণও বেশি ঘটেছে। এছাড়া সাতকানিয়া ও মিরসরাই উপজেলাতেও গরুর মধ্যে এ রোগ ছড়িয়েছে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, মশা-মাছি বা পোকামাকড়ের কামড়ের মাধ্যমে এই রোগ ছড়াচ্ছে। তবে এটি এটি ছোঁয়াচে নয়।
১৯২৯ সালে সর্বপ্রথম আফ্রিকায় এ রোগ শনাক্ত হলেও বাংলাদেশে আগে কখনও এ রোগ গরুর মধ্যে দেখা যায়নি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি বাংলাদেশে আগে কখনও দেখা যায়নি। প্রথমবারের মতো কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহার একটি খামারে এটি শনাক্ত হয় জুলাইয়ের দিকে। ভারত থেকে আমাদের দেশে এটি এসেছে বলে আমরা ধারণা করছি।”তিনি বলেন, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গরুর চামড়ায় বসন্ত রোগের মতো ফোসকা, গায়ে জ্বর দেখা দেয়। এতে গরু দুর্বল হয়ে পড়ে, দুধ উৎপাদন কমে যায় এবং চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হতে পারে।
চিটাগাং ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাঈম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রথমবারেই এ রোগ ‘মহামারি’ আকার ধারণ করেছে। একটি গরুতে হলে অন্য গরুতে এটি ছড়িয়ে পড়ছে।
তাদের সমিতিভুক্ত ১৫৫টি খামারের গরুতে এ রোগ ছড়িয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “এ রোগ নিয়ে আমরা চিন্তিত। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সাথে যোগাযোগ রেখে খামার মালিকরা এটি প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে।”
তবে রেয়াজুল হক বলেন, এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। খামারের এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও নেই।
“যদি মশা-মাছি বা অন্য কোনো পোকামাকড় লাম্পি ডিজিজ আক্রান্ত গরুকে কামড়ের পর অন্য একটিকে কামড়ায়, তবে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। একটি খামারে হলে পাশের আরেকটি খামারে এ রোগ নাও হতে পারে।”
তার ভাষ্যে, অনেকটা ডেঙ্গু রোগের মতোই ছড়ায় লাম্পি স্কিন রোগ। একবার কোনো গরু আক্রান্ত হলে ভবিষ্যতে আবার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। রোগকে অবহেলা না করলে মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও কম।এসব কারণে আক্রান্ত খামারের সংখ্যা বেশি হলেও আক্রান্ত গরু সংখ্যা কম বলে দবি করেন তিনি।
চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি গরুর খামার রয়েছে কর্ণফুলী উপজেলায়। সেখানে খামারের সংখ্যা সাড়ে পাঁচশ’র উপরে। সেখানকারই একটি খামারের গরুতে লাম্পি স্কিন ডিজিজ প্রথম ধরা পড়ে।
কর্ণফুলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাকিবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বছরের ২২ জুলাই একটি খামারে প্রথম রোগটি ধরা পড়ে। রোগটি আমাদের দেশে প্রথম হওয়ায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর নমুনা সংগ্রহ করে বিদেশ থেকে বিশেষ কিটস এনে পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’।
কর্ণফুলী উপজেলার প্রায় সব খামারের গরু আক্রান্ত হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “খুব সাধারণ চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ থেকে সেরে ওঠা যেতে পারে। তবে যেসব খামারের মালিক ভুল চিকিৎসা করেছিল, সেখানে কয়েকটি গরু হয়ত মারা গেছে।”
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রেয়াজুল হক বলেন, সাধারণ চিকিৎসায় ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে একটি গরু এ রোগ থেকে সেরে উঠতে পারে। তবে একবার হলে এটিকে অবহেলা করলে চলবে না। খামার যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি খামারে এ রোগের টিকা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।