গবেষণার ডেটাবেইজ তৈরির তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের গবেষক ও বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল যেন জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যবহার হয় তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এজন্য গবেষণার থেকে পাওয়া নতুন জ্ঞান সবার জন্য সহজলভ্য করতে একটি তথ্যভাণ্ডার (ডেটাবেইজ) তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মাঝে ফেলোশিপের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “শুধু গবেষণা করলেই চলবে না। গবেষণার ফলাফলটা যে কী সেটাও জানতে চাই। আর গবেষণার ফলাফলটা যে দেশের কাজে লাগছে সেটাও নিশ্চিত হওয়া চাই। গবেষণার জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে তার ফলাফলটা তো জানতে হবে।
“আমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব, যাদেরকে স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে, যারা গবেষণা করছেন, তাদের একটা ডেটাবেইজ হওয়া প্রয়োজন। তাদের কী গবেষণালব্ধ জ্ঞান আছে, সেটা আমরা কীভাবে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারি, কে কোন দিকে সবচেয়ে বেশি পারদর্শী, তাকে সে ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারব, সেভাবেই একটা ডেটাবেইজ করা দরকার।”
এবার (২০১৯-২০ অর্থবছর) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ এবং বিশেষ গবষণা ফেলোপিশের অধীনে তিন হাজার ২০০ জনকে ১৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে।
উন্নতির জন্য গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে সরকারের বিনিয়োগের প্রেক্ষাপটও জানান।
তিনি বলেন, “১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে দেখলাম গবেষণার জন্য কোনো বিশেষ বরাদ্দ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের নিজের মতো করে যা পারত গবেষণা করত। কিন্তু একটা দেশের সার্বিক উন্নয়নে কোন ক্ষেত্রে গবেষণা করতে হবে, কিভাবে দেশ এগোবে তা নিয়ে গবেষণার কোনো উদ্যোগই ছিল না। আমরা প্রথমেই একটি থোক বরাদ্দ দেওয়া শুরু করলাম শুধু গবেষণার জন্য।
“দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে, খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে হবে। এই খাদ্য নিশ্চিয়তা দিতে হলে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে হবে। সেখানে গবেষণার প্রয়োজন আছে। পুষ্টির নিশ্চিয়তার জন্যও গবেষণা প্রয়োজন। সেটাও এখন চলছে। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা কেন পিছিয়ে থাকব?”
অধিক জনসংখ্যার দেশ হয়েও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পেছনে বিজ্ঞানীদের গবেষণাকর্ম বড় ভূমিকা রেখেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
“আমি মনে করি গবেষণাটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আজকে স্ট্রবেরি ফলটা বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে। এটা নিশ্চিয়ই আগে হতো না, যিনি উৎপাদন করছেন তিনি গবেষণার মাধ্যমেই এর চাষ শুরু করেছিলেন। খাদ্যে যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন হয়েছে, হাইব্রিড ধান উৎপাদন হচ্ছে সেটাও গবেষণার ফসল। এসবের বিরোধীতা আছে। কিন্তু আমি জানি আমাদের জায়গা কম, অন্যদিকে ১৬ কোটি মানুষ। তাদের খাদ্যের নিশ্চিয়তা দিতে হবে, ফসল উৎপাদন বাড়াতে হবে। মিঠা পানির মাছ, তরি তরকারি, শাক সবজিতে আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। এগুলো গবেষণার ফসল।
“জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের জন্য আমরা বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। তা দিয়ে শুধু লেখাপড়া শেখা নয়; যারা এমএস করবেন, পিএইচডি করবেন তাদের সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্যই এই উদ্যোগ।”
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্কুল পর্যায়ের শিক্ষায় বিষয়ভিত্তিক বিভাজন তুলে দেওয়ার পক্ষে যে মত দিয়েছিলেন তা আবারও ব্যক্ত করেন।
“১৯৬৩ সালে আইয়ুব খানের শাসনামলে ক্লাস নাইন থেকে কারা বিজ্ঞান পড়বে, কারা আর্টস পড়বে, কারা হোম ইকনমিক্স পড়বে… কিন্তু আমি মনে করি ওই ক্লাসের বিজ্ঞান শিক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত।
“আমাদের শিক্ষা নীতিতেও সেটা আছে…এইচএসসি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সব বিষয় জানবে। যখন তারা ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হবে সেখান থেকে ভাগটা হলে সবাই শিখতে পারবে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি স্কুলে সায়েন্স, আর্টস ভাগ থাকবে না। সবাই সব বিষয় পড়বে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “স্বাধীনতার পর দেশের মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে জাতির পিতা কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ তিনি গড়ে তুলছিলেন। তারপরেও এই দিকটা তিনি ভোলেন নাই। বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণাকে যে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন এটাই তার প্রমাণ করে।”
সরকার তথ্যপ্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিনিয়োগ এবং বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার ফলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন মর্যাদার আসন পেয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
“বাংলাদেশকে এখন আর কেউ অবহেলার চোখে দেখতে পারে না। কারণ এখন আমরা আর কারও কাছে হাত পাতি না। বাজেট সাত গুণ বৃদ্ধি করেছি। স্বাক্ষরতার হার বেড়ে ৭৩ শতাংশ হয়েছে। বেতবুনিয়াতে জাতির পিতা ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র করে দিয়ে গেছেন। আমরা এখন স্যাটেলাইট পাঠিয়েছি মহাকাশে, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট করছি। জেলায়, জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি এবং গষেণাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমি চাই এভাবেই দেশ এগিয়ে যাক।”
বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান প্রযুক্তি ট্রাস্ট থেকে ২০১০-১১ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ৫১৯ জনকে ১৫৫ কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডিত্তোর গবেষণার জন্য জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ দেওয়া হচ্ছে। ২০০৯-১০ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত এই খাতে ২৫ জন গবেষকের মধ্যে ৮২ কোটি ৬২ লাখ টাকা ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকেও শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য ফেলোশিপের পাশাপাশি গবেষণা অনুদান দেওয়া হচ্ছে।
এই ট্রাস্ট থেকে ২০০৯-১০ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত তিন হাজার ২৪২টি প্রকল্পের অনুকূলে ১৩০ কোটি ৯৩ লাখ টাকার গবেষণা অনুদান দেওয়া হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৬১টি প্রকল্পে ১৬ কোটি টাকার গবেষণা অনুদান দেওয়া হচ্ছে।