গন্তব্য সেন্টমার্টিন ..
বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলার ভেতর ভ্রমন পিপাসুদের মনে জায়গা করে আছে সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপটি। সাধারণত, নভেম্বরের দিকে ট্যুরিস্টদের চাপ একটু কম থাকে এবং সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ এই সময়ে খুবই মনোমুগ্ধকর থাকে। সাগরের স্বচ্ছ নীল জলরাশি দেখে মনে হবে, আপনি অন্য কোনো দেশের দ্বীপে বেড়াতে যাচ্ছেন!! তবে, ডিসেম্বর থেকে পর্যটকদের যাতায়াত বেড়ে যায়, তাই সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পরিবেশটাও অনেকটা রুক্ষ হয়ে উঠে।
ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে সেন্ট মার্টিন না যাওয়ায় বেটার। কারণ, তখন সেন্ট মার্টিনের পরিবেশের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠে। আট বর্গকিলোমিটারের ছোট্ট একটি দ্বীপে প্রতিদিন গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার পর্যটকের বিচরণ সেন্ট মার্টিনের পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে তুলে। তাই সেন্ট মার্টিন যাওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে নভেম্বর, ডিসেম্বর, এবং জানুয়ারী মাস। আর পুরো নভেম্বর মাস জুড়ে জাহাজ অপারেটররা তাঁদের টিকেটের উপর ৫০% ছাড় দেয়। ১০০০-১২০০ টাকার টিকেট আপনি এই সময় ৫০০ টাকার মধ্যে পাবেন।
আবহাওয়া এবং অন্যান্য সবকিছু অনুকূলে থাকলে সাধারণত নভেম্বর থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। কিন্তু করোনার মদ্ধে সব কিছু এখন ঝুলে আছে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের উপর।
কিভাবে যাবেন!?
১। কক্সবাজার থেকে ট্যুর অপারেটরদের মাধ্যমে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করা যায়। কক্সবাজারের প্রায় প্রত্যকটি হোটেলের আশে-পাশে সেন্ট মার্টিনের ট্যুর অপারেটরদের বুথ পাবেন। যাতায়াত, থাকা, খাওয়াসহ সবকিছু একসাথে বুকিং দেয়া যায়। তবে, অনেকের রুচির ভিন্নতা আছে, তাই খাবারের ব্যাপারটা নিজেদের মধ্যে রাখা ভাল। আবার সেন্ট মার্টিনে গিয়েও নিজেদের পছন্দমত হোটেল বুক করতে পারবেন।
২। যারা ঢাকা থেকে সরাসরি সেন্ট মার্টিন যেতে চান-
ঢাকার ফকিরাপুল অথবা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি টেকনাফের বাস পাবেন। সেন্ট মার্টিন পরিবহন, গ্রীন লাইন, এস আলম, শ্যামলী পরিবহনে করে সরাসরি টেকনাফের জাহাজঘাটে যেয়ে নামতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে সকাল নয়টার আগে আপনাকে জাহাজঘাটে যেয়ে উপস্থিত থাকতে হবে। কারণ, সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজগুলো সকাল ৯টা থেকে ৯.৩০ এর মধ্যে ছেড়ে যায়।
৩। কক্সবাজারের লাল দিঘীর পাড়, কক্সবাজার বাস টার্মিনাল এবং লিংক রোড থেকে ভোরে সরাসরি টেকনাফের বাসে করে টেকনাফ জাহাজঘাটে যাওয়া যাবে। ভাড়া জনপ্রতি ১২০-১৩০ টাকা নিবে। এক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে, এই বাসগুলোর লেগস্পেস একটু ভালো। কিন্তু ট্যুর অপারেটরদদের ভাড়া করা বাসগুলোর লেগস্পেস খুবই কনজেস্টেড। জাহাজঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনের যাওয়া আসার টিকেট করতে পারবেন। সরাসরি জাহাজ অপারেটর থেকে টিকেট করলে ট্যুর অপারেটরদের থেকে কিছুটা কমদামে পাবেন। যারা সেকেন্ড টাইম সেন্ট মার্টিন যাবেন, তাদের জন্য এই পদ্ধতিটা খুবই কার্যকর।
নন এসি স্ট্যান্ডিং টিকেট এসির চেয়েও ভালো। দামেও সাশ্রয়ী। কারণ হিসেবে বলা যায়, পর্যটকদের বেশিরভাগই জাহাজের ডেকে, গাংচিলদের চিপস খাওয়ানো এবং সমুদ্র দেখতে দেখতেই সময় কাটিয়ে দেয়। জাহাজের ভিতরে যেয়ে আপনার বসতেই ইচ্ছে করবে না। মনে হবে, সব সৌন্দর্য বাইরে। ও হ্যাঁ, সমুদ্রের সাদা গাংচিলের সাথে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাইলে অবশ্যই সাথে করে চিপস নিয়ে যাবেন। তবে, দয়া করে, কেউ চিপসের প্যাকেট সমুদ্রে ফেলবেন না।
আর কিছু কিছু জাহাজের ডেকে সাউন্ড সিস্টেম সেট করা থাকে, যেখানে পছন্দের গানগুলো প্লে হতে থাকে। সাথে এক্সট্রা হিসেবে দেখতে পারেন জাহাজের পিচ্ছি ড্যান্সারদের মনোমুগ্ধকর ড্যান্স। আর হ্যাঁ, সেন্ট মার্টিনের পুরো সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে কমপক্ষে দুইদিন সময় নিয়ে যাবেন।
সতর্কতাঃ
১। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পুরো বীচটা অসংখ্য কোরাল বা প্রবালে ভরপুর। প্রবালগুলো খুবই ধারালো হয়ে থাকে। জোয়ারের সময় বীচ এর বেশিরভাগ প্রবাল পানির নীচে থাকে। তাই সতর্কতার জন্য সাতারের সময় এন্কলেট বা শক্ত মোজা পরে বীচে নামা উচিত। অন্যথা, পা কেটে যাওয়া বা পায়ে ব্যাথা পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
২। সেন্ট মার্টিন জাহাজঘাট থেকে একটু দূরে পশ্চিম কোণ বরাবর একটি বীচ আছে। কোণের এই বীচটিতে দুইদিক থেকে পানির ঢেউ এসে সৈকতে আছড়ে পড়ে। তাই দেখতে খুব সুন্দর এবং আকর্ষণীয় মনে হয়। কিন্তু, দুই দিক থেকে ঢেউ আসার কারণে এখানে ‘রিপ কারেন্ট’ বা উল্টো স্রোতের সৃষ্টি হয়। তাই, কোণ সংলগ্ন এই রিস্কি জোনটি এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
**করোনার ভেতরে মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করুন