January 20, 2025
আঞ্চলিক

গণমাধ্যমে কর্মী ছাঁটায়ের প্রতিবাদে খুবিতে মানববন্ধন

রেজওয়ান আহম্মেদ, খুবি প্রতিনিধি

বর্তমান করোনা মহামারির শুরু থেকে ফ্রন্ট লাইনে থেকে কাজ করা গণমাধ্যম কর্মীদের বিভিন্ন মিডিয়া হাউজ নানান অজুহাতে ছাঁটাই করছে। তাদের এমন অমানবিকতার প্রতিবাদে আজ (রবিবার) বিকালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করে।
মানববন্ধনে উপস্থিত খুবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শরীফুল ইসলাম বলেন, মাথা ব্যাথার সমস্যা মাথা কেটে ফেলা হতে পারে না। গণমাধ্যম কর্মী ছাঁটাই না করে প্রকাশক ও মালিকপক্ষের উদ্দ্যেশে বলবো আপনারা বেতন কমিয়ে দিন, পৃষ্ঠা সংখ্যা কমিয়ে দিন, ব্যয় সংকোচ করুন। প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে আলোচনায় বসুন কিন্তু এই অমানবিকতা বন্ধ করুন।
খুবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক মাজেদুল ইসলাম বলেন, খুব কম গণমাধ্যমই ওয়েজ বোর্ড ফলে করে। ব্যতিক্রম বাদে বেশির ভাগ গণমাধ্যমই তাদের কর্মীদের খুব কম বেতন দিয়ে থাকে। এর মধ্যে যদি তাদের চাকরিচ্যুত করা হয় তাহলে তারা তাদের পরিবার নিয়ে কোথায় যাবে?
খুবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক মামুন অর রশীদ বলেন, মালিক-সম্পাকদের বলবো আপনার ব্যয় সংকোচন নীতি মেনে চলুন প্রয়োজনে একদিন পত্রিকা ছাপা বন্ধ রাখুন কিন্তু গণমাধ্যম কর্মী ছাঁটাই বন্ধ করুন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই পেশায় কখনই আসতে চাইবে না।
খুবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক ছোটন দেবনাথ বলেন, করোনা মহামারিকে অজুহাত হিসেবে ধরে মালিক-সম্পাদকরা আজ নেক্কারজনকভাবে কর্মী ছাটাই করছে। গণমাধ্যম একটি শিল্প একে বাঁচাতে তাদের উচিত মুনাফালোভী মানসিকতা থেকে সড়ে আসা।
খুবি জার্নালিজম ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, গণমাধ্যম কর্মীরা জীবন ঝুঁকি রেখে কাজ করে কিন্তু তাদের কাজের তেমন কোন মূল্যায়ন পায় না। এই পেশায় গণমাধ্যম কর্মীরা ভাই বলে সম্মোধন করলেও আজ বিপদের সময় ভাই তার ভাইকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
খুবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ইমরান ইসলাম মামুন বলেন, গণমাধ্যম হলো সমাজের দর্পণ। কিন্তু এই দর্পণ থেকে যদি প্রলেপ উঠিয়ে দেওয়া হয় তবে আমরা সমাজকে দেখতে পারবো না।
খুবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ইয়াছিন আহমেদ জীবু বলেন, গণমাধ্যমে যখন কারো চাকরি চলে যায় তখন তার পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে। এই দেখে আর পাঁচটি পরিবারের কেউই এই পেশায় আর আশতে চায় না।
খুবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মীর হাসিব বলেন, গণমাধ্যম কর্মী ছাঁটাইয়ের এই অমানবিক কাজ দীর্ঘমেয়াদী গণমাধ্যম পেশাকেই হুমকির মুখে ফেলবে। কোন মেধাবী এই পেশায় আর আসতে চাইবে। তখন গণমাধ্যমও রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে কাজ না করে মালিকপক্ষের বিশেষ স্বার্থ হাসিলে কাজ করবে যা গণতন্ত্রের বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করবে।
মানববন্ধনে উপস্থিত খুবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের মৌসুমি আফরোজ বলেন,    গণমাধ্যম কর্মীদের এই অমানবিক ছাঁটাইয়ের তীব্র প্রতিবাদে আজ আমরা এখানে মানববন্ধন করছি। যতদিন এই কর্মী ছাটাই বন্ধ না হবে ততদিন আমাদের এই প্রতিবাদ চলবে।
সম্প্রতি প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ইত্তেফাক বেশ কিছু প্রধান সারির মিডিয়া হাউজগুলো করোনা মহামারিতে পত্রিকার সার্কুলেশন কমে যাওয়া, বিজ্ঞাপন না পাওয়া, লোকশান হওয়াসহ নানা অজুহাতে গণমাধ্যম কর্মীদের ছাঁটাই করেছে এবং করছে।
খুবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা মনে করেন বাংলাদেশের সর্বোত্ত এই ঘৃণ্য কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানানো উচিত। অমানবিকভাবে কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে রাষ্টের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যম চরম সংকটে পরছে। এতে করে এই পেশায় মেধাবীদের না আশা ও দীর্ঘমেয়াদে এই পেশা হুমকির মুখে পরবে। অবিলম্বে গণমাধ্যমের সাথে জড়িত মালিক-সম্পাদকসহ সকল পক্ষকে আরো বেশি মানবিক ও এই পেশাকে বাচাতে ব্যয় সংকোচন সহ ভিন্ন পন্থা অবলম্বনের আহবান জানানো হচ্ছে। একই সাথে দেশের সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সংগঠন, সরকার তথা রাষ্ট্রকে যথাপোযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *