গণভবনে ‘কনসেনট্রেশন হারিয়েছিলেন’ নূর
গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রায় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরদিন ডাকসুর পুনর্নির্বাচন দাবি করার ব্যাখ্যা দিয়ে নুরুল হক নূর বলেছেন, গণভবনের ওই অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী দেখে ‘কনসেনট্রেশন হারিয়েছিলেন’ তিনি। নির্বাচিত হওয়ার পর
রোববার বিকালে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ফল বাতিল করে পুনঃতফসিল ঘোষণার দাবিতে সোমবার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নূর।
তিনি বলেন, “আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- কারচুপি ও জালিয়াতির নির্বাচন হলেও আমরা দুটি পদে বিজয়ী হয়ে এসেছি। এখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেই নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচন চাচ্ছে। আমি তাদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে আছি।”
এ সময় সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন, আগের দিন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নির্বাচন নিয়ে এই মনোভাব তিনি ব্যক্ত করেছিলেন কি না।
জবাবে নূর বলেন, “কালকে গণভবনে যেটা, আমরা প্রথমে শুনেছিলাম যে, সেখানে হল সংসদ এবং কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু সেখানে আমরা দেখেছি যে, হল পর্যায়ের ও অন্যান্য ইউনিটের ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।এমনকি মহানগর উত্তর-দক্ষিণেরও।
“সেখানে যাওয়ার পর আমার নিজেরও অস্বস্তিবোধ হয়েছে। সেজন্য আপনারা জানেন যে, আসলে স্বাভাবিকভাবে মানুষের কনসেনট্রেশনটা একবার নষ্ট হয়ে যায়, আমি অনেক কথা বলতে পারিনি। তারপরও যেটা ছিল, আমরা ওখানে জাস্ট গিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখে, আমাদের সৌজন্যতা থেকে, কেননা তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী ব্যক্তি, রাষ্ট্রের অভিভাবক।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে শনিবার বিকালে গণভবনে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু ও হল সংসদে নির্বাচিতরা। সেখানে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মাঝে প্রয়াত ‘মায়ের চেহারা খুঁজে পাওয়ার’ কথা জানান নূর।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ মন্তব্য করে ডাকসুর পক্ষ থেকে তার সরকারের অগ্রযাত্রায় সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ছাত্রলীগ নেতারা তাকে ‘শিবির’ বলে প্রচার করেছিলেন জানিয়ে নূর বলেন, তিনি ছাত্রলীগ করতেন। তার পরিবারও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
বক্তব্যে ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “১০০ শতাংশ শুদ্ধতা সব কাজে পাওয়া যায় না। কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকবে।”
তার পরদিন নির্বাচন নিয়ে এই বক্তব্য দেওয়ার ব্যাখ্যায় নূর বলেন, “দেখেন ডাকসু নির্বাচনটা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়, এটি কিন্তু গভর্নমেন্টের কোনো বিষয় নয়। এই নির্বাচনে যারা জয়ী হয়েছেন, যদিও আমরা বলেছি কারচুপি ও অনিয়মের একটি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রী তাদের ডেকেছেন। তার প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধাবোধ থেকে আমরা সেখানে গিয়েছি।
“আমাদের যে ডাকসুর বাইরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আবাসন নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার যে সমস্যা রয়েছে সে ব্যবস্থাগুলো নিয়ে কথা বলেছি। আর ডাকসুর নির্বাচনের এখতিয়ার কিংবা এ বিষয়ে কিন্তু গভর্নমেন্টের কিছু করার নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান।
“আমি তার নজরে এনেছি যে, এই নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে, ছাত্ররা সেটির সমাধান চাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জায়গা থেকে তিনি যেন প্রশাসনকে এ বিষয়টি অবহিত করেন।”
সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নূর বলেন, “আপনারা আমাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করবেন না। এত কারচুপি ও অনিয়মের পরও ভিপি ও সমাজসেবা পদে এত কারচুপি দিয়েও ব্যালান্স করতে পারেনি।”
আন্দোলনের মধ্যে ডাকসুর ভিপি পদে দায়িত্ব নেবেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাইলে আমি দায়িত্ব গ্রহণ করব। না চাইলে করব না।”
বিকালে নূর এই সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে সকালে মধুর ক্যান্টিনেই সংবাদ সম্মেলন করে ডাকসুর পুনর্নির্বাচনের দাবিতে সোমবারের ওই কর্মসূচি ঘোষণা করেন প্রগতিশীল ছাত্রঐক্যের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী।
নূরের পরে ওই জায়গায়ই সংবাদ সম্মেলনে বাকী চারটি প্যানেলের পক্ষে একই কর্মসূচি ঘোষণা করেন স্বতন্ত্র জোটের ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান।
ডাকসু নির্বাচন বাতিল, পুনঃতফসিল দেওয়া, উপাচার্যের পদত্যাগ, মামলা প্রত্যাহার ও হামলাকারীদের বিচারের পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন তিনি।
সকালের সংবাদ সম্মেলনে ভিপি নূরের অবস্থান পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনা করেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী।
তিনি বলেন, “নূর গণভবনে যে বক্তব্য দিয়েছে, সেটা তার আগের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাদের সংগঠন আমাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ভোট বর্জন করেছিল এবং আন্দোলন করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু কাল যে বক্তব্য দিয়েছে সেটা সাংঘর্ষিক।”
লিটন বলেন, “২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখেছি এই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনে সামান্যতম ত্রুটিও মেনে নেওয়া যায় না।
“এ কারণে ছাত্রলীগ ব্যতীত পাঁচ প্যানেল এই প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করেছে।”