খুলনা রেলওয়ে থানায় ওসি’র নেতৃত্বে তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ
ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন
তদন্ত কমিটি গঠন
দ: প্রতিবেদক
খুলনায় ফেন্সিডিলসহ গ্রেফতারের অভিযোগে আদালতে তোলার পর এক তরুণী (৩০) খুলনা রেলওয়ে থানার ওসি ও চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। ওই তরুণীর অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে তাকে আটক করে রেল পুলিশের সদস্যরা। রাতে রেলওয়ে থানায় রেখে তাকে ‘পালাক্রমে ধর্ষণ করেন’ ওসি ওসমান গনি পাঠান, এসআই গৌতম কুমার পাল, এএসআই নাজমুল এবং কনস্টেবল মিজান ও হারুন।
মাদক আইনের এক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার ওই তরুণীকে খুলনার মহানগর হাকিম আতিকুস সামাদের আদালতে তোলে রেলওয়ে পুলিশ। রবিবার তাকে আবারও আদালতে আনা হয়। তখন আদালতে বিচারকের সামনে মেয়েটি বিচারকের সামনে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে ধরেন। অভিযোগ শুনে বিচারক মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গতকাল সোমবার দুপুরে ধর্ষণের শিকার ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষা শেষে ওই নারীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. শফিকুজ্জামান বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেতে কয়েক দিন সময় লাগবে। তার আগে তারা কিছু বলতে চান না।
এদিকে খুলনার জিআরপি (রেলওয়ে) থানায় তিন সন্তানের জননীকে (৩০) গণধর্ষণের ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নির্দেশে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের ডিআইও-১ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শ ম কামাল হোসেইন ও দর্শনা রেলওয়ে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. বাহারুল ইসলাম।
পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে উলেখ করা হয়, খুলনা রেলওয়ে থানা হাজতে রেখে ছয় থেকে সাতজন পুলিশ তাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ ও মারধর করে- মর্মে খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং তাকে ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর জন্য খুমেক হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার সঠিক তথ্য উদঘাটনে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ঘটনাটি সরেজমিন অনুসন্ধান করে সুস্পষ্ট মতামতসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী সাত দিনের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীর বড় বোন জানান, তার বোনের শ্বশুর বাড়ি সিলেটে ও বাবার বাড়ি খুলনার ফুলবাড়িগেট এলাকায়। তাদের মা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তাকে দেখতে খুলনায় এসেছে বোন। বোন নিজে অসুস্থ থাকায় বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) যশোরে ডাক্তার দেখাতে যান। পরদিন শুক্রবার খুলনায় আসার সময় ফুলতলা এলাকায় জিআরপি পুলিশ প্রথমে তাকে মোবাইল চুরির অপরাধে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে রাতে জিআরপি পুলিশের ওসি ওসমান গনি তার বোনকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেন। এরপর আরও চারজন পুলিশ সদস্য তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন বলেও অভিযোগ করেন। পরে শনিবার পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ তাকে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
তিনি আরও জানান, আদালতে বিচারকের সামনে নেওয়ার পর তার বোন জিআরপি থানায় তাকে গণধর্ষণের বিষয়টি তুলে ধরেন। এরপর আদালতের বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তার ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দেন।
ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি ওসমান গনি বলেন, ওই নারীকে পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ গত ২ আগস্ট আটক করা হয়। সেই মামলায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আদালতে গিয়ে ওই নারী ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। ফেন্সিডিলের মামলা থেকে রক্ষা পেতে ওই নারী এ ধরণের মিথ্যা অভিযোগ করেছে বলেও দাবি করেন ওসি ওসমান গনি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলার সমন্বয়কারী এ্যাড. মোমিনুল ইসলাম জানান, ওই তরুণীকে তারা আইনি সহায়তা দেবেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সংস্থার পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।