খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের স্ক্রাব বিক্রির নামে চলছে হরিলুট
কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রতিদিন অতিরিক্ত মাল
বাইরে নিয়ে যাচ্ছে, অভিযোগ এলাকাবাসীর
দ. প্রতিবেদক
বন্ধ খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের স্ক্রাব বিক্রির নামে চলছে হরিলুট। রাতের আধারে নদী পথে মিলের মালামাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। শনিবার নির্ধারিত স্ক্রাবের সাথে মিলের অন্যান্য মালামাল নেওয়ার প্রস্তুতির সময় একটি পক্ষের চোখে পড়ায় বর্তমান স্ক্রাব নেওয়া স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। মিলের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রতিদিন লক্ষ টাকার অতিরিক্ত মাল ট্রাকযোগে মিলের বাইরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, অতিসম্প্রতি বিসিআইসি ডিপিএম এর মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কল্যাণ ট্রাস্ট, সেনা কল্যাণ সংস্থা, ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকর্স এবং বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে মিলের নির্ধারিত মালামালের অর্ডার দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বিমান বাহিনী কল্যান ট্রাস্টকে ১১টি জাহাজ, সেনা কল্যান সংস্থাকে ৭টি বার্জ, ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কার্সকে ১৭টি গাড়ী এবং পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টকে ২৮টি ক্রেনের অর্ডার দিয়েছে। এ ৪টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা মালামাল না নিয়ে সাব কন্ট্রাকের মাধ্যমে অন্য ৪টি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে। গতকাল শনিবার পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট এর সাব কন্ট্রাক্টর মজিবর আয়রন স্টিলের কর্মীরা ক্রেনের মালামালের সাথে অন্যান্য গুদাম থেকে মালামাল সরিয়ে ক্রেনের মালামালের সাথে মিশিয়ে রেখে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে এলাকাবাসীর চোখে ধরা পড়ে। একইভাবে ডকইয়ার্ড ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাব কন্ট্রাক্টর রাশেদুল ইসলাম তার কর্মীদের দিয়ে গাড়ীর মালের সাথে মিলের বিভিন্ন স্থানে রাখা ঢালাই মালামাল ভেঙ্গে লুকিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। যা স্থানীয় মানুষের চোখে ধরা পড়ে।
নগরীর ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলম খোকন জানান, তারা অনেকবার অতিরিক্ত মালামাল নেওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। কিন্তু কোন ফল হয়নি। মাঝে ভ্যান ভর্তি মিলের মাল চুরি করে নেওয়ার সময় জনগণ হাতে নাতে ধরে দেয় যা এখনও খালিশপুর থানায় রয়েছে। মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হিসাব বিভাগের দ্বায়িত্বরতদের প্রতি এলাকাবাসীর অভিযোগের তীর।
এ ব্যাপারে ১৩নং আওয়ামী লীগের সভাপতি মোর্শেদ আহমেদ মনি জানান, প্রতিনিয়ত মিলের মেশিনের দামী যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কেন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ব্যবস্থা না নেওয়ার অর্থ তারা এর সাথে জড়িত আছেন।
তবে এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করেন, বন্ধ নিউজপ্রিন্ট মিলের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম এসবের সাথে ওৎপ্রত ভাবে জড়িত। তাকে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাই ‘ডালমে কুছ্ কালা হায়’ বলে অনেকে মনে করেন।
এ বিষয়ে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামউল্লাহ খন্দকার জানান, শনিবার স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করে ডকইয়ার্ড ও পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের সাব ঠিকাদারদের স্ক্রাবের স্তুপে চুক্তির বাইরের মালামাল দেখতে পেয়েছেন। তিনি মালামাল নেওয়া তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেন। তবে যথাযথ তদারকি না করলে মিলের মালামাল যা আছে তাও লুটপাট হয়ে যাবার সম্ভাবনা বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ