খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে নির্মিত মডেল মসজিদের উদ্বোধন আজ
দেশে একযোগে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
এফ এম হাফিজুল ইসলাম
খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদের উদ্বোধন করা হবে আজ। ৫টি জেলা ও ৪৫টি উপজেলায় মোট ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খুলনার এই মসজিদ উদ্বোধনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত থাকবেন তিনি।
‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে, ধর্মীয় ভূল-ব্যাখ্যা দূর করে ইসলামের সঠিক বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার একযোগে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে। সরকার দেশব্যাপী মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করছে।
খুলনায় এই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ ্র১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। মিনারের গম্বুজ বাদে মসজিদে আরও চারটি গম্বুজ রয়েছে। এরমধ্যে একটি বড় গম্বুজ ও তিনটি ছোট। চার তলা ভবনটি দাঁড়িয়ে রয়েছে ৩৭ হাজার ৪০০ স্কয়ার ফিট জায়গার ওপর। ভবনটির নিচ তলায় রয়েছে গাড়ি পার্কিং, প্রতিবন্ধীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা। রয়েছে ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ইসলামিক বুক স্টোর কার্যালয় ও মরদেহ গোসলের ব্যবস্থা। ২য় তলায় প্রধান নামাজ ঘর, সম্মেলন কক্ষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিস কক্ষ ও উন্মুক্ত জায়গা যেখানে ঈদের নামাজ পড়া হবে। ৩য় তলায় পর্যটকদের আলাদা কক্ষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের রিসার্চ সেন্টার, ইসলামিক লাইব্রেরি, হিফজ ও মক্তবখানা। খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমের থাকার জন্যও রয়েছে পৃথক কক্ষ। থাকছে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ওজু খানার ব্যবস্থা এবং পৃথক নামাজের কক্ষ।
এছাড়াও অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা সিঁড়ি এবং শিশুদের জন্য শিক্ষাসুবিধা থাকছে এই মডেল মসজিদে। অত্যাধুনিক শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন শেষে উন্মুক্ত করা হবে।
মডেল মসজিদের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর (ডিপিডি) শফিক তালুকদার সাভার উপজেলা মডেল মসজিদ প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংকালে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীতে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদগুলোর উদ্বোধন করবেন।’
তিনি বলেন, মসজিদগুলো খুলনা জেলা, ঢাকার সাভার উপজেলা, ফরিদপুরের মধুখালী ও সালথা উপজেলা, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া ও কুলিয়ারচর উপজেলা, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা, রাজবাড়ি সদর উপজেলা, শরিয়তপুর সদর ও গোসাইহাট উপজেলা, বগুড়ার শারিয়াকান্দি, শেরপুর ও কাহালু উপজেলা, নওগাঁর সাপাহার ও পরশা উপজেলা সিরাজগঞ্জ জেলা ও সদর উপজেলা, পাবনার চাটমোহর উপজেলা, রাজশাহীর গোদাগারি ও পাবা উপজেলা, দিনাজপুরের খানসামা ও বিরোল উপজেলা, লালমণিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা, পঞ্চগড় সদর ও দেবীগঞ্জ উপজেলা, রংপুর জেলা, সদর উপজেলা, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলা, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা, নোয়াখালির সুবর্ণচর উপজেলা, ময়মনসিংহের গফরগাও ও তারাকা-া উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলা, লোহাগড়া, মীরসরাইর ও সন্দ্বীপ উপজেলা, জামালপুর সদর ও ইসলামপুর উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও বিজয়নগর উপজেলা, ভোলা সদর, সিলেটের দক্ষিণসুরমা উপজেলা, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা, খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা, কুষ্টিয়া সদর, চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় নির্মিত হয়েছে।
এই কর্মকর্তা আরো বলেন, বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম-শত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরো ১০০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে। শফিক তালুকদার জানান, দেশে যুগান্তকারী ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫০টির মতো মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এটা বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদ প্রকল্প হতে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় ও ডিসেম্বরে তৃতীয় পর্যায়ে আরো ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হবে। তিনি বলেন, ইসলামের আদর্শের সাথে মিল রেখে এবং জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের কথা চিন্তা করেন।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর পর, নিজস্ব অর্থায়নে এটা সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প উল্লেখ করে তিনি জানান, ‘বিশ্বে এই প্রথম কোন সরকার একসাথে এই বিপুল সংখ্যক মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে।’
এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে পিডিপি বলেন, ইসলামে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের কোন ঠাঁই নেই। ইসলামী মূল্যবোধ ও মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের প্রচারণার পাশাপাশি জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের মূল বাণী প্রচার করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন আইএফ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যাক্ট, ১৯৭৫ প্রণয়ন করেন উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারার সাথে সঙ্গতি রেখে, প্রকল্পটিতে মসজিদের সাথে ইসলামিক সংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রকল্পটিতে সন্ত্রাসবাদ ও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ব্যাপারে জন-সচেতনতার তৈরির পাশাপাশি ইসলামের বিকাশে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালানো হবে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, ৪২০টি মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এবং বাকি মসজিদগুলোর নির্মাণকাজ শিগগিরই শুরু করা হবে।
এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পিএমও) সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ব্রিফিংকালে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী ৫৬০টি মডেল মসজিদ-কাম ইসলামিক সংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন এবং তিনি মসজিদগুলো এ, বি ও সি- এই তিনটি মডেলে নির্মাণ করতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী জেলা ও সিটি কর্পোরেশনের জন্য একটি মডেল এবং উপজেলা ও উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য অপর দুটি মডেল বাছাই করেছেন।
পিএমও সচিব বলেন, জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকাগুলোতে প্রতিটি মসজিদের জন্য ১৫.৬১ কোটি টাকা, উপজেলাগুলোর জন্য ১৩.৪১ কোটি টাকা ও উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্য ১৩.৬০ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ক্যাটাগরির এ এর আওতায় প্রায় ৬৯টি চার-তলা মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে এলিভেটরের ব্যবস্থা থাকছে। প্রতিটি ফ্লোর ২৩৬০.০৯ স্কোয়ার মিটার। ৬৪টি জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকাগুলোতে এই মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। বি ক্যাটাগরির আওতায় ৪৭৫টি মসজিদ নির্মিত হবে। মসজিদ প্রতিটি ফ্লোর ১৬৮০.১৪ স্কোয়ার মিটার করে হবে। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১৬টি মসজিদ সি ক্যাটাগরির আওতায় হবে। এর প্রতিটি ফ্লোর ২০৫২.১২ স্কোয়ার মিটার করে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সাভার উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মারুফ বিল্লাহ্ বলেন, এই মসজিদগুলো ইসলামিক গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। এখান থেকে সাধারণ মানুষের কাছে ইসলামের সঠিক বার্তা ছড়িয়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের একটি বৃহৎ ধর্মীয় প্রকল্পের জন্য আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। এটা ইসলামের প্রতি তাঁর যে বিশেষ ভক্তি ও শ্রদ্ধা রয়েছে- তার প্রমাণ।’
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়