খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের কর্মবিরতি অব্যাহত
দ: প্রতিবেদক
খুলনা ও যশোর অঞ্চলের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকদের রাজপথ-রেলপথ অবরোধের কারণে টানা পঞ্চম দিন উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বৈশাখের তপ্ত রোদে তেতে উঠছে খুলনা শহরের পিচঢালা পথগুলো। তীব্র গরমে রোজা রেখে হাঁপিয়ে উঠেছে মানুষ। ঠিক এমনই মুহূর্তে পাটকল শ্রমিকদের বিক্ষোভ-মিছিল, রাজপথ-রেলপথ অবরোধে উত্তাল হয়ে উঠেছে খুলনার শিল্পাঞ্চল।
বকেয়া মজুরি, মজুরি কমিশন, গ্রাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং বদলি শ্রমিকদের স্থায়ীকরণসহ ৯ দফা দাবিতে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের শ্রমিকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে থেকে টানা পঞ্চমদিনের মতো প্রায় অর্ধ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী যথারীতি কাজে যোগ না দেওয়ায় মিলের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
একই দাবিতে বিকেল ৪টা থেকে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী নগরের খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড়ে তিনঘণ্টা রাজপথ-রেলপথ অবরোধ করছে শ্রমিকরা। অবরোধের পাশাপাশি শ্রমিকরা রাজপথে নামাজ আদায় ও ইফতারি করেন।
খুলনার খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিল, দিঘলিয়া উপজেলায় স্টার জুট মিল, আটরা শিল্প এলাকার আলীম ও ইস্টার্ন এবং যশোরের নওয়াপাড়ায় অবস্থিত যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রি (জেজেআই) ও কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকেরা এসব কর্মসূচি পালন করছেন।
গত বুধবার দুপুরে ঢাকার বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) কার্যালয়ে পাটকল শ্রমিক লীগ ও সিবিএ ও নন সিবিএ’র বৈঠকে ১৩ মে থেকে সারাদেশের পাটকলগুলোতে ধর্মঘট চলাকালে প্রতিদিন বিকেল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাজপথ-রেলপথ অবরোধ এবং রাজপথে ইফতার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, খুলনাঞ্চলের ৯টি পাটকলে গড়ে প্রতিদিন ১০০ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। সেই হিসেবে গত চারদিনে ৩৫০ মেট্রিকটন পাটপণ্য উৎপাদন বঞ্চিত হয়েছে।
পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, বকেয়া মজুরি-বেতন পরিশোধ, জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ ২০১৫ কার্যকর, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্রাচুইটির অর্থ পরিশোধ, চাকরিচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারীদের পুনর্বহাল, সব মিলে সেটআপের অনুক‚লে শ্রমিক-কর্মচারীদের শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ ও স্থায়ীসহ ৯ দফা দাবিতে হঠাৎ করেই গত (রবিবার) ৫ মে দুপুর থেকে একে একে খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় শ্রমিকেরা।
বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহŸায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মো. মুরাদ হোসেন বলেন, রমজানেও আমরা রাজপথে থালা-বাসন হাতে ভুখা মিছিল করছি। পথেই নামাজ পড়ছি ইফতার করছি। কয়েক মাস হয় বাজার কাকে বলে জানে না শ্রমিকরা। ছেলে-মেয়েদের মুখে কোনো ভালো খাবার দিতে পারছি না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এ শ্রমিক নেতা।