January 20, 2025
আঞ্চলিককরোনালেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

খুলনায় হ্রাস পেয়েছে করোনা শনাক্তের সংখ্যা, সাফল্যের পেছনে ‘লকডাউন’

 বিগত ২৪ দিনের বিশ্লেষণ 

আলি আবরার

বর্তমানে চলমান পরিস্থিতে খুলনা জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। জুনের ২৫ তারিখ থেকে জুলাইয়ের ১৮ তারিখ পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ ও শনাক্তের উপর একটি জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা একই রকম থাকলেও প্রথম ৮ দিন জেলায় মোট শনাক্ত হয় ৯২৭ জন এবং শেষের ৮ দিনে হয় ৬৬৪ জন যা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কিছুটা সাফল্য হিসেবে দেখছেন।

খুলনা জেলায় করোনার অবস্থা বিগত ২৪ দিনের 

 

এপ্রিলের শুরুতে সর্বপ্রথম খুলনায় করোনা আক্রান্ত রোগী ধরা পরে ও ধীরে ধীরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে জেলায়। ঈদের পর পরই জেলায় হঠাৎ করে বেড়ে যায় করোনা রোগীর সংখ্যা। এর আগে আশেপাশের জেলাগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এপ্রিলের ৬ তারিখে খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকাকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও এপ্রিলের ৮ তারিখে খুলনা জেলাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লকডাউন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। জুনের শুরুতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে জেলা প্রশাসন থেকে খুলনা শহরের ২৪ ও ১৭নং ওয়ার্ড এবং আইচগাতি ইউনিয়নকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করে জুনের ২৬ তারিখ থেকে “হার্ড লকডাউনের” ঘোষণা দেয় যা জুলাইয়ের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বলবৎ থাকে।

এ বিষয়ে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদের  সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “বিগত ৭-১০ দিনের কথা যদি বলেন তবে দেখা যাচ্ছে যে সংক্রমন সংখ্যাটা কিছুটা কম, যেখানে কিছু দিন আগেও ১০০ এর ওপরে ছিলো। এটা অবশ্যই লকডাউনের সফলতা”।

তিনি আরও জানান “লকডাউন শিথিল থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, ঈদের ৩ দিন যানবাহন বন্ধ রাখতে হবে। গরুর হাটে পর্যাপ্ত জায়গা রাখতে হবে ও রাস্তা একমুখী করতে হবে। ঢোকার ও বের হওয়ার আলাদা রাস্তা থাকবে ও কোন অবস্থাতেই অতি বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ সেখানে যাবে না। আর প্রত্যেকটা হাটেই হাত ধোয়ার আলাদা জায়গা রাখতে হবে ও সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, নাহলে আইনানুগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।

প্রত্যেকটা হাটেই হাত ধোয়ার আলাদা জায়গা রাখতে হবে ও সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, নাহলে আইনানুগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে

খুলনায় খুব শীঘ্রই আর কোন লকডাউন হবে কিনা দক্ষিণাঞ্চলের এমন প্রশ্নরের উত্তরে ডা. সুজাত আহমেদ জানান “না, আর কোন লকডাউনের আপাতত পরিকল্পনা নাই, আর সব জোন আশা করা যাচ্ছে ইয়োলো থেকে গ্রিন হয়ে যাবে। আমরা আশা করছি খুলনা ধীরে ধীরে করোনামুক্ত করা সম্ভব হবে এবং আমরা সেভাবেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। লকডাউনের পর ১৭ ও ২৪নং ওয়ার্ড এবং আইচগাতি ইউনিয়ন এখন ইয়োলো জোনে।”

 

আক্রান্তের সংখ্যার ব্যপারে খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজের  সাথে কথোপকথনকালে তিনি দক্ষিণাঞ্চলকে জানান, “আমাদের লকডাউনের পূর্বে এই সংখ্যাটা বেশি ছিলো, কিন্তু লকডাউনের পর থেকে এই সংখ্যাটা বেশ কমে এসেছে। বিশেষ করে ২৪ নং ওয়ার্ড ও আইচগাতি ইউনিয়নে অনেক কমে গিয়েছে কিন্তু ১৭নং ওয়ার্ডে এখনো একটু আছে। কিন্তু যেহেতু হিসাবের সময় সব জায়গারই নমুনা আসে সে প্রেক্ষিতে বলা যায় কয়েকদিন আগেও যেখানে ১৩০-১৪০ জন করে শনাক্ত হয়েছিলো সেখানে শেষ কয়েকদিনে ৬০-৭০-৮০ এর ভেতরে আছে, যা আগের থেকে একটু সন্তোষজনক। তবে আমি মনে করি যদি আমরা যদি আরেকটু সতর্ক হতে পারি তাহলে এই সংখ্যাটা আরো নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব”।

খুলনা মেডিকেলে রিপোর্ট দিতে একটু দেরি হচ্ছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডা. মেহেদী নেওয়াজ জানান, “এই পরিস্থিতির ইম্প্রুভ আরসিটি-পিসিআর মেশিন আসলেই হবে, প্রত্যেকদিনেই অনেক পরীক্ষা হচ্ছে আর প্রায় প্রতিদিনই প্রায় ৬০০ করে স্যাম্পেল আসছে যেখানে আমরা প্রত্যেকদিন পরীক্ষা করতে পারি ১৮৮টি তারপরও আমরা একটু জোর করেই কিছু বেশি সংখ্যক স্যাম্পেল (২৮২টি) পরীক্ষা করছি। তারপরও পরীক্ষা কিন্তু আমরা করে যাচ্ছি এবং প্রায় প্রত্যেকদিনই কিছু স্যাম্পেল জমা হয়ে যাচ্ছে যেগুলা আসলে ব্যাকলগ তৈরি করছে”।

তিনি আরও জানান, খুলনা মেডিকেলে করোনা টেস্টের রিপোর্ট অনলাইনে পাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে যা ২-১ দিনে ভেতরেই শুরু করা যাবে বলে তিনি আশা করছেন। এর ফলে রোগীদের রিপোর্ট পেতে কষ্ট অনেক কমে যাবে।

জুলাইয়ের ১১ তারিখে  করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. কামাল হোসেন জানায় আমদানি হলেই খুলনায় আরও একটি করোনাভাইরাস পরীক্ষার পিসিআর মেশিন এবং কোভিড হাসপাতালে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সরবরাহ করা হবে।

প্রশাসনের চেষ্টার পরেও অনেকেরই অসচেতনতা লক্ষ্য করা যায় নগরীতে যা যে কোন সময় ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে সবাইকে।

জুলাইয়ের ১৯ তারিখ পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫৯৫ জন ও মৃত ৫৩ জন। এবং মোট সুস্থ হয়েছে ১৫৮৪ জন।

 

বিভাগের তথ্যঃ

জুলাই ১৯, ২০২০ এর দুপুর ১২ টা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, আজকে পর্যন্ত বিভাগে আক্রান্ত ৮৯৪১ জন যার ৩৫৯৫ ই খুলনা জেলার। বিভাগে এ পর্যন্ত করোনা জয় করেছেন ৪২২৯ জন যা মোট আক্রান্ত সংখ্যার ৪৭%। এখনো পর্যন্ত বিভাগে আইসলেশনে আছে ৯৪৯ জন ও মৃত্যুবরন করেছে ১৫৬ জন, মৃত্যুহার ১.৭৪%।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *