খুলনায় স্কুলছাত্রী লামিয়া গুলিবিদ্ধের ঘটনায় ‘রহস্য জট’ খুলছে না
অজ্ঞাত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ঠিকাদারের মামলা
দ. প্রতিবেদক
খুলনায় স্কুলছাত্রী লামিয়ার উপর গুলি চালানোর ঘটনাটি এখন পর্যন্ত রহস্যের মধ্যেই রয়েছে। গুলিবিদ্ধ লামিয়ার পরিবার এ ঘটনায় মামলা দায়ের না করলেও অজ্ঞাত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন গুলি চালানো ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলী। তবে তিনি ওই চাঁদাবাজদের নাম প্রকাশ করেননি। বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে তদন্ত করছে পুলিশ।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, খুলনা নগরীর মিস্ত্রিপাড়া আরাফাত জামে মসজিদের পাশের একটি গলির ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলীর বাড়ি চাঁদাবাজরা এসেছিল দাবি করা অর্থ নিতে। এ সময় ঠিকাদারের সঙ্গে বাক-বিতাণ্ডার একপর্যায়ে চাঁদাবাজদের উদ্দেশে নিজের বৈধ পিস্তল দিয়ে গুলি করেন ইউসুফ। চাঁদাবাজদের উদ্দেশে করা ঠিকাদারের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বিদ্ধ হয় লামিয়ার পায়ে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে খুমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়।
লামিয়া মহানগরীর সদর থানাধীন মিস্ত্রিপাড়াস্থ আরাফাত জামে মসজিদ এলাকার জামাল হোসেনের মেয়ে। সে নগরীর ইকবালনগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।
খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, লামিয়াকে গুলিবর্ষণে ব্যবহৃত অস্ত্রটি জব্দ রাখা হয়েছে। ওই ঘটনায় ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলী বাদী হয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে অজ্ঞাত চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। যার নং-৩৭, ২৯-৮-২০২০ইং। ঘটনাটি একটু গভীরেই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখনো কাউকে আটক করা যায়নি।
এ বিষয়ে আলোচিত ঠিকাদার ইউসুফ আলী জানান, তার ছোড়া গুলিতে নয় তার কাছে চাঁদা চাইতে আসা চার দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছে লামিয়া। এ ঘটনায় নিজের প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগ এনে খুলনা সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বাড়ীতে এসে চাঁদা দাবিকৃত চার যুবককে আমি চিনি না; তাই অজ্ঞাতদের আসামী করে মামলা করেছি। কারা বিভিন্ন সময়ে আপনার কাছে ঠিকাদারী কাজটি দাবি করছিলেন? কারা বিভিন্ন সময়ে চাঁদা দাবি করছিল? শিশু লামিয়ার কি অবস্থা এখন? এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যস্ত আছেন বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে মোবাইল বন্ধ রাখেন তিনি।
এদিকে স্কুলছাত্রী লামিয়া গুলিবিদ্ধের ঘটনায় ৩৫ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও এখনো তারা অস্ত্রোপচার করা যায়নি। খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১১-১২ নম্বর ওয়ার্ডের ২২ নম্বর বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সে। হাসপাতালের বেডে লামিয়ার পাশে মাসহ পরিবারের সদস্যরা শান্তনা দিয়ে ব্যথার কষ্ট ভোলানোর চেষ্টা করছেন। চিকিৎসকরা সকালে কয়েকবার লামিয়াকে দেখেও গেছেন।
খুমেক হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, লামিয়ার যেখানে গুলি লেগেছে, সে জায়গাটি অনেক সেনসেটিভ। অনেক রক্ত নালী রয়েছে সেখানে। যার জন্য থ্রি-ডি সিটি স্ক্যান ও আল্ট্রা সোনোগ্রাম করতে দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বোঝা যাবে অপারেশন করা যাবে কি না।
গুলিবিদ্ধ লামিয়ার পরিবারের সদস্যরা জানান, ঠিকাদার ইউসুফ আলী লামিয়াকে হাসপাতালে দেখতে এসেছেন এবং চিকিৎসার সব খরচ দিচ্ছে ঠিকাদার ইউসুফ আলী। যার কারণে তারা মামলা করবে না।
অপরদিকে এলাকাবাসী বলছেন, লামিয়াকে গুলিবর্ষণের ঘটনাটি রহস্যে ঘেরা। ইউসুফ আলীর কাছে কারা ঠিকাদারি কাজটি দাবি করেছিল, তিনি কেন- সেটা এখনো প্রকাশ করছেন না। বাড়িতে নিয়ে চাঁদাবাজদের বসতে দিয়েছেন অথচ তিনি চেনেন না। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে তিনি মামলা করলেন এটা অবিশ্বাস্য।
এলাকাবাসীর কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, ঠিকাদারের পরিচিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তার বাড়িতে এসেছিলেন। যার কারণে তিনি পরিচয় গোপন করছেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (সাউথ) মো. শাকিলুজ্জামান বলেন, ইউসুফ আলীর পিস্তলটি লাইসেন্স করা। তবে অন্যের ছোড়া গুলিতে নয় তারই ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছে স্কুলছাত্রী লামিয়া।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ