খুলনায় লকডাউনের মধ্যেও বিভিন্ন জেলা থেকে আসছে মানুষ, হুমকিতে জনজীবন
জয়নাল ফরাজী : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ৮ এপ্রিল থেকে খুলনায় লকডাউন চলছে। কিন্তু জেলা প্রশাসনের এই লকডাউন (অবরুদ্ধ) এর মধ্যেও প্রতিনিয়ত বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন প্রবেশ করছে। তাদের কেউ কেউ হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে সচরাচর ঘুরে বেড়াচ্ছে। যদিও তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও মেট্রোপলিটন পুলিশ। তবুও হুমকির মুখে পড়ছে খুলনাবাসীর জনজীবন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ৬ এপ্রিল খুলনা মহানগরী থেকে মানুষ ও যানবাহন প্রস্থান এবং আগমন বন্ধ ঘোষণা করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)। ওই সময় সরকার নির্ধারিত সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি ও যানবাহনের গমনাগমন ছাড়া অন্য সব ব্যক্তি ও যানবাহনের খুলনা মহানগরী এলাকা থেকে প্রস্থান এবং নগরীতে আগমন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ৮ এপ্রিল রাতে গোটা খুলনাকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেন খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন।
ওই সময় তিনি বলেন, খুলনা জেলায় কোনো যানবাহন ঢুকতে পারবে না ও খুলনা জেলা থেকে কোনো যানবাহন বাইরে যেতে পারবে না। এর আগে এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল, সেটিই মূলত ‘লকডাউন’। এর আগে ওই দিন দুপুরে জনস্বার্থে জারি করা গণবিজ্ঞপ্তিতে খুলনা জেলা প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত খুলনা জেলায় সব ধরনের যানবাহন প্রবেশ ও বাহির হওয়া বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
কেএমপি সূত্র জানায়, গত ৮ দিনে বিভিন্ন জেলা থেকে খুলনা মহানগরীতে আগত ৯৩ জন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এদের মধ্যে ২০ এপ্রিল ১৮ জন, ২১ এপ্রিল ৮ জন, ২২ এপ্রিল ১২ জন, ২৩ এপ্রিল ৭ জন, ২৪ এপ্রিল ১২ জন, ২৫ এপ্রিল ৯ জন, ২৬ এপ্রিল ৮ জন, ২৭ এপ্রিল ৬ জন ও ২৮ এপ্রিল ১৩ জনের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়। ওই সব বাড়িতে লাল পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, হোম কোয়ারেন্টাইন ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত ৯ উপজেলা ও মহানগরীতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর মাধ্যমে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। আইন ভঙ্গকারীদের জরিমানা করা হচ্ছে, একই সাথে সতর্ক করাও হচ্ছে।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় এখন পর্যন্ত ১২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন নারায়ণগঞ্জ ফেরত চিকিৎসক, তার সংস্পর্শে এসে আরও দুইজন আক্রান্ত হয়েছেন। একজন তাবলীগ ফেরত আক্রান্ত ছিলেন, তিনি সুস্থ হয়েছেন। একজন ঢাকা ফেরত পুলিশ সদস্যও আক্রান্ত হয়েছেন। মাদারীপুর ফেরত একজন মোবাইল সার্ভিসিং ইঞ্জিনিয়ার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তার দুই ছেলেও এখন করোনায় আক্রান্ত। এদের নমুনা সংগ্রহকারী স্বাস্থ্যকর্মীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার নতুন করে খুমেক হাসপাতালের একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স আক্রান্ত হয়েছেন, যিনি করোনা হাসপাতালে দায়িত্বরত ছিলেন। এছাড়া রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও একজন নৈশপ্রহরী আক্রান্ত হয়েছেন।
এ বিষয়ে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জিয়াউর রহমান দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে বলেন, খুলনায় লকডাউন চলছে, তার মধ্যেও অনেকেই বাইরের জেলা থেকে প্রবেশ করছে। এদেরকে চিহ্নিত করে হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কেউ না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার থেকেই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে নিষেধ থাকলেও অনেকেই মালবাহী ট্রাকে করে চুপিসারে প্রবেশ করছে, তাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এছাড়া ইতোমধ্যে খুলনার যেসব এলাকায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, সেসব এলাকা নির্দিষ্ট করে লকডাউন করা হয়েছে। যাতে সেখানে কেউ প্রবেশ করতে বা সেখান থেকে কেউ বের হতে না পারে।