খুলনায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় ফিরেছে অর্থনীতির সুদিন
কমেছে চাঁদাবাজি, বেড়েছে বিনিয়োগ
জয়নাল ফরাজী
গত দুই বছরে খুলনা অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বেশি কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান, তৈরি হয়েছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে নতুন সব শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ বেড়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা করছে নির্বিঘ্নে। এতে করে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে অর্থনীতির সুদিন ফিরেছে। আর এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে। বিশেষ করে খুলনা-২ আসনে সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে এ অঞ্চলের অর্থনীতি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন সদর-সোনাডাঙ্গা থেকে নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলে বিরাজ করছে রাজনৈতিক স্থিতিশীল অবস্থা। বিগত দিনে এ অঞ্চলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রতিষ্ঠান, নৌ পরিবহন ও সড়ক পরিবহনসহ সব সেক্টরেই ছিলো বেপরোয়া চাঁদাবাজি। লাগামহীন চাঁদাবাজির কারণে বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন শিল্প উদ্যোক্তারা। ব্যবসা-বাণিজ্যে সর্বদা বিরাজ করতো অস্থিরতা। চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি থাকতো পরিবহনসহ সকল সেক্টর। তবে সেখ জুয়েল নির্বাচিত হওয়ার পর রাজনীতিতেই বইছে সুবাতাস। যার ফলে একটা সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগকে নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এখন আওয়ামী লীগসহ অন্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতে স্বচ্ছ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এতে করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রতি আস্থা ও ভরসা বেড়েছে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের। আগামীতে এমন পরিবেশ অব্যাহত থাকলে অচিরেই শিল্প নগরী খুলনার অর্থনীতি নজর কাড়বে দেশবাসীর।
সূত্র আরও জানায়, করোনাভাইরাসের মহামারীদের বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও কর্মসংস্থান হারিয়েছে নানা পেশার মানুষ। কিন্তু মহামারীর এই দশা জয় করে সম্প্রতি আরাফাত পলি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড নামক রপ্তানিযোগ্য পলি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংর অত্যাধুনিক প্রতিষ্ঠান। নগরীর পাশেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চকমথুরাবাদ রোডে প্রায় ১.২০ একর জমির এটি স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে দেড় শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এস এম আরিফুর রহমান মিঠু দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে বলেন, ‘রূপালী ব্যাংকের ঋণে এ প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করেছে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ১৫০ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আগামীতে আরও লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত দিনে বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে এই অঞ্চলে মানুষ বিনিয়োগ করতে সাহস পেত না। এতে করে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠত না। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। তারা খুলনাঞ্চলে বিনিয়োগ করতে রাজি হচ্ছে। এই পরিবেশ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
এ বিষয়ে কেডিএ নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ মাসুদুর রহমান দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে জানান, ‘করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে এর আগে গত দেড় বছরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে ব্যবসা ভালোই চলছিলো। বিশেষ করে রাজনীতির পট পরিবর্তনের কারণে কাউকে চাঁদা দিতে হয় না। ফলে ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন।’
খুলনা বিভাগীয় নৌ-পরিবহন মালিক সমিতির পরিচালক মো. ইলিয়াস হোসেন লাবু দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে বলেন, ‘এর আগে নৌযান চলাচলের জন্য অনেককে চাঁদা দিতে হতো। তবে সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল খুলনার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এবং চেম্বার অব কমার্স একটি কমিটি করে দেওয়ায় বর্তমানে কাউকে চাঁদা দিতে হয় না। এছাড়া নৌযান থেকে পণ্য খালাসে দেরি হলে আগে কেউ ক্ষতিপূরণ পেত না। কিন্তু বর্তমানে নৌযান মালিকরা সেই ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। এতে করে মালিকদেরও আগ্রহ বাড়ছে।’
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ