খুলনায় মুজিববর্ষে ঘর পাচ্ছেন সেই ‘মুক্তিযোদ্ধা’ অশোক দাস, নেওয়া হচ্ছে স্বীকৃতির ব্যবস্থা
জেলা প্রশাসকের অনন্য উদ্যোগ
দ. প্রতিবেদক
মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ঘর পাচ্ছেন খুলনার সেই অসহায় ও দরিদ্র ‘বীরমুক্তিযোদ্ধা’ অশোক দাস। একই সাথে তাঁর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রাপ্তির আবেদন যাচাই বাছাই এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি দেখে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন পিএএ তাৎক্ষণিকভাবে অনন্য এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ১১ জানুয়ারি নগরীর খালিশপুরের বাসিন্দা কবি সুলতান মাহমুদ শ্রাবণ ফেসবুকে মুক্তিযোদ্ধা অশোক দাসের একটি ছবিসহ লেখা পোস্ট করেন। যা হুবহু তুলে ধরা হলো : ‘মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় বীর সেনা শ্রী অশোক দাশ, বয়সের ভারে বেসামাল। ১৯৭১ সনে বনগাঁতে ট্রেনিং করে অনেকগুলো সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন তিনি ৮ নম্বর সেক্টরে ক্যাপ্টেন আর এন মুখার্জির সাথে কাজ করেছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরে তিনি কোনো সম্মাননা দূরে থাক মুক্তিযুদ্ধের সনদ পর্যন্ত পাননি। তিনি এক সময় ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন। এখন তিনি চিত্রালী বাজার খালিশপুরে ইউনিয়ন মাঠের বিপরীতে ফুটপাতে বসে পুরাতন জুতা স্যান্ডেল বিক্রি করে নিজের রোজগার করে কোনোমতে বেঁচে আছেন। দিনের বেলা মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুরাতন জুতা স্যান্ডেল ক্রয় করেণ। সন্ধ্যায় সেগুলো বিক্রি করেন। দুটি ছেলে সন্তান এখন মৃত। আমি তার সাথে কথা বলা কালীন বার বার চোখ মুছছিলেন। আমিও নিজেকে সামলাতে পারিনি। অশ্রুসজল চোখে তার সাথে কথা বলছিলাম। আমার বাবা ও শ্বশুর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তারাও সনদ এবং সরকারি সুযোগ বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা।’
বিষয়টি মুহুর্তের মধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়। যা খুলনা জেলা প্রশাসকের দৃষ্টিগোচরে আসে। তখন তিনি একজন ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে গাড়ি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রতিবেদনকৃত অশোক দাসকে ডিসি অফিসে আনয়ন করেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, ‘মঙ্গলবার রাতেই উনাকে ফোন দেয়া হলেও উনি ফোন রিসিভ না করায় বুধবার সরেজমিনে উনার সাথে কথা বলে উনার অসহায় অবস্থার প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে মুজিববর্ষের গৃহ প্রদানের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। একই সাথে উনার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রাপ্তির আবেদন যাচাই বাছাই এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া অসহায় বৃদ্ধ অশোক দাসকে নগদ আর্থিক সহায়তা ও উনার স্ত্রীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
এদিকে জেলা প্রশাসকের মহানুভবতায় অশোক দাস অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। এ সময় জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষে এক আবেগঘন পরিবেশের অবতারণা হয়। জেলা প্রশাসকের অনন্য এ উদ্যোগকে সকলেই প্রশংসা করেন।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ