খুলনায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে একত্রে দোয়ায় শামিল ৬৬৬৬ আলেমসহ পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ
দ. প্রতিবেদক
মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপনে ভিন্নধর্মী আয়োজন করে খুলনা জেলা প্রশাসন। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাঁচ লক্ষাধিক নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে দোয়া ও মোনাজাতে একত্রে যুক্ত করা হয়। এছাড়া খুলনা জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও হেফজখানায় ১৯ হাজার দুইশত বার পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে খতম সম্পন্ন হয়।
বুধবার দিবসটি উদযাপনে খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে ছিল মূল আয়োজন। সেখানে বিকেলে ছয় হাজার ছয়শত ৬৬ জন আলেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সমবেত হয়ে আসরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁর পরিবারের শহিদ সদস্যগণ এবং মুক্তিযুদ্ধে প্রাণদেওয়া ৩০ লাখ শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এসময় জুম প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইনে খুলনা জেলার এক হাজার আটশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, এক হাজার দুইশত মসজিদের মুসল্লিসহ পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ এই দোয়ায় একত্রে অংশগ্রহণ করেন।
দোয়া অনুষ্ঠানে কেসিসি’র মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান ভূঞা, বাংলাদেশ আ’লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সৈয়দ রবিউল আলম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, পুলিশ সুপার এসএস শফিউল্লাহ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ প্রমুখ অংশ নেন। দোয়া পরিচালনা করেন খুলনা টাউন জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোঃ আবু সালেহ।
এর আগে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর হৃদয় হোক রঙিন’।
সকালে বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্র প্রাঙ্গণে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন খুলনা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ও মহানগর কমান্ড, কেসিসি’র মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মহানগর, জেলা ও অংগসংগঠনসমূহ, স্কুল-কলেজ, পেশাজীবী সংগঠনসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বিভিন্ন মসজিদে বাদজোহর মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠান এবং মন্দির, গীর্জাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। হাসপাতাল, কারাগার, শিশু পরিবার ও এতিমখানায় বিশেষ খাবার পরিবেশন ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে স্মরণিকা, গ্রন্থ, দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়কদ্বীপ, সকল সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে আলোকসজ্জা, মুজিববর্ষ উদযাপনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যানার ও ফেস্টুন স্থাপন, সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়। সন্ধ্যায় আতশবাজির আয়োজন করা হয়। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও শিশুদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগর ভবন চত্ত্বরে আলোচনা সভা, কেককাটা ও শিশুদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। কেসিসি’র শিক্ষা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যরক্ষা ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্যানেল মেয়র মোঃ আলী আকবর টিপু, কাউন্সিলরগণ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কান্তি বালা উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড স্যার ইকবাল রোড শাখায় কেক কেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করে। এছাড়া খুলনার বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আলোচনা সভা, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও কেক কেটে দিবসটি উদযাপন করে। মুজগুন্নী শিশু বিকাশ কেন্দ্রে শিশু একাডেমির আয়োজনে আলোচনা সভা ও শেখ রাসেল শিশু পাঠাগারের উদ্বোধন করা হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ নিজস্ব উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। খুলনা জেলা তথ্য অফিস বিভিন্ন স্থানে বড় আকারের এলইডি স্ক্রিনে স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর ওপর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। জেলা ও উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পুস্তক ও ডকুমেন্টরি প্রদর্শন এবং বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ প্রচার করা হয়। স্থানীয় পত্রিকায় বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। উপজেলা পর্যায়েও অনুরূপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ