খুলনায় নানা অজুহাতে ঘরের বাইরে মানুষ
# দিনে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান, রাতে জমজমাট আড্ডা
এফ এম হাফিজুল ইসলাম
করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ে টালমাতাল খুলনা বিভাগ। প্রতিদিনই শনাক্ত ও মৃত্যুতে রেকর্ড ভাঙছে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বিভাগটি। প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঢাকা বিভাগে সংক্রমণ ও মৃত্যুর মিছিল থাকলেও এ যাত্রায় খড়গ যাচ্ছে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের উপর দিয়ে। বিভাগের অন্য ৯ জেলার মতো খুলনায়ও মৃত্যুর মিছিল থামছে না। নগরীর তিনটি সরকারি হাসপাতাল ও একটি বেসরকারি হাসপাতালের তথ্যমতে, গত তিনদিনে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের। যার মধ্যে খুলনা জেলারই ২৭ জন। বাকিরা পার্শ্ববর্তী জেলার। তিনদিনে জেলায় শনাক্তের হার যথাক্রমে ৩৪, ৩৬ ও ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিদিনই শনাক্তের হার বাড়ছে। তবে মৃত্যু ও শনাক্তের হার বাড়লেও বাড়েনি জনসচেতনতা। কঠোর লকডাউনের মধ্যেও নানা অজুহাতে ঘরের বাইরে বের হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সুনির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও আড্ডা-গল্পে মাতোয়ারা পাড়া-মহল্লা।
সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভায় গত ২২ জুন থেকে ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে সারাদেশের সাথে একযোগে কঠোর লকডাউনের আওতায় পড়ে খুলনা। ঘোষিত লকডাউনে জনসাধারণের চলাচল সীমিত করতে কাঁচাবাজার ও জরুরি প্রয়োজন ব্যতিত সকল অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার নির্দেশনা থাকলেও নানা অজুহাতে অহেতুক ঘোরাফেরা করছে মানুষ। জনসাধারণ ঘোরাফেরা বন্ধ করতে দিনের বেলা নিয়মিত জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করলেও রাতের বেলা সাধারণ মানুষের চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে। সন্ধ্যার পর পাড়া-মহল্লায় চায়ের দোকানগুলোতে আড্ডা যেন চোখে পড়ার মতো। পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সাথে নিয়মিত সেনাবাহিনী টহল থাকলেও রাতের এ অপ্রয়োজনীয় আড্ডা কোনক্রমেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। এর ফলে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর শঙ্কা আরও বাড়ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জনগণের অহেতুক চলাচল রোধ ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। গত রবিবার ৭৪ জনকে ৪০ হাজার ৫০০ টাকা, সোমবার ১১৩ জনকে ৭৮ হাজার ২০০ টাকা ও মঙ্গলবার ১৬৩ জনকে ১ লাখ ১৫ হাজার ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া নিয়মিত জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে।
খুলনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে জানান, খুলনায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত তিনদিনে খুলনায় ৭৩৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতির শঙ্কা রয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে জানান, মঙ্গলবার খুমেকের ল্যাবে মোট ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৬৫টি নমুনা ছিল খুলনার। এদের মধ্যে মোট ১১৫ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। যাদের মধ্যে খুলনার ১২০ জন, বাগেরহাটের ৫ জন, যশোর ও সাতক্ষীরা ২ জন করে, নড়াইল, গোপালগঞ্জ ও পিরোজপুরের একজন করে রয়েছেন।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়