November 27, 2024
আঞ্চলিককরোনালেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

খুলনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ জনের মৃত্যু, ৭ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু

এফ এম হাফিজুল ইসলাম
খুলনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং উপসর্গে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৯ জন করোনা আক্রান্ত ও একজন উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। গত রবিবার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত নগরীর তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এদিকে করোনার বিস্তার রোধে খুলনা জেলা ও মহানগরীতে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন। ইতোমধ্যে লকডাউনে জনগণের চলাচল সীমিত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
খুলনা করোনা হাসপাতালের ফোকালপার্সন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে এবং একজন উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃতরা হলেন খুলনার দিঘলিয়ার আইয়ুব আলী (৫৬), নগরীর করিমনগরের আলমগীর খান (৫৯), বটিয়াঘাটার নিত্যানন্দ বিশ্বাস (৫৫) ও রামপালের খান তৈয়ব আলী (৭৫)। আর করোনা উপসর্গে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ১৩০ শয্যার করোনা হাসপাতালে সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৬১ জন রোগী ভর্তি ছিল। যার মধ্যে রেডজোনে ১০২ জন, ইয়ালোজোনে ২০ জন, এইচডিইউতে ১৯ জন এবং আইসিইউতে ২০ জন চিকিৎসাধীন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৩২ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৩ জন।
গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডা. গাজী মিজানুর রহমান জানান, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন- নগরীর টুটপাড়ার আসাদুজ্জামান (৫৫), যশোরের কেশবপুরের হায়দার আলী (৫৫), বাঘারপাড়ার পিপল (৩৫), মনিরামপুরের মনোয়ারা (৬০)।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ৭৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এরমধ্যে আইসিইউতে চারজন এবং এইচডিইউতে ৫ জন চিকিৎসাধীন। ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে ১৩ জন ভর্ডি হয়েছে এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২জন। এছাড়া হাসপাতালের আরটি পিসিআর মেশিনে ২৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৯ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. কাজী আবু রাশেদ জানান, ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ১৪ জন।
খুলনা জেলা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খুলনা জেলা ও মহানগরীতে আগামী ২২ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত নিম্নোক্ত বিধি-নিষেধ আরোপ এবং লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। খুলনায় করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ার কারণে ২২ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত সব ধরনের দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল ও কোচিং সেন্টারসমূহ বন্ধ থাকবে।
তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও কাঁচাবাজারের দোকান প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ওই সময়ের মধ্যে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো পার্সেল আকারে খাবার সরবরাহ করতে পারবে। ওষুধের দোকান সার্বক্ষণিক খোলা রাখা যাবে। সব ধরনের পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
জেলার অভ্যন্তরে সব ধরনের সাপ্তাহিক হাট/গরুর হাট বন্ধ থাকবে। জেলার অভ্যন্তরে অথবা আন্তঃজেলা গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে। খুলনা রেলস্টেশনে ট্রেনের আগমন ও বহিরাগমন বন্ধ থাকবে। ইজিবাইক, থ্রি-হুইলারসহ যান্ত্রিক যানবাহন বন্ধ থাকবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। বাইরে অবস্থানকালে সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। তবে সরকারি-বেসরকারি অফিসের জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস চলাকালীন তাদের নিজ নিজ অফিসের পরিচয়পত্র নিয়ে বাইরে চলাচল করতে পারবে।
আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা যেমন-কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং উৎপাদনশীল শিল্প ও কল-কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম এ বিধি-নিষেধের আওতামুক্ত থাকবে। ওই বিধি-নিষেধ খুলনা জেলা ও মহানগরের সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোরভাবে মেনে চলার অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


খুলনায় সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকর করতে সোমবার দুপুরে খুলনার জেলা প্রশাসক এবং করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এর সভাপতিত্বে তাঁর সম্মেলন কক্ষে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কঠোর লকডাউন সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বাত্মক সহায়তা করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন কাউন্সিলরবৃন্দ।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *