খুলনায় করোনা রোগীদের সেবায় শেখ পরিবারের মানবিক উদ্যোগ
# দুটি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও দুটি অক্সিজেন ব্যাংক চালু
# বৈরী আবহাওয়াতেও মানুষের পাশে দলীয় নেতাকর্মীরা
এফ এম হাফিজুল ইসলাম
করোনাভাইরাসের মরণ ছোবলে বিপর্যস্ত খুলনা। প্রতিনিয়তই বাড়ছে মৃত্যু ও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। রোগীদের চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন করোনা হাসপাতালে ১৩০টি শয্যা থাকলেও তা যেন প্রয়োজনের তুলনায় অতুল। শয্যা সংকট মেটাতে খুলনা জেনারেল হাসপাতালকেও করোনা হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে করোনা রোগীদের। এর বাইরেও বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন অসংখ্য আক্রান্ত মানুষ। যাদের প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট। এসব রোগীদের শ্বাসকষ্ট দূর করতে প্রতিনিয়ত প্রয়োজন হচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের। প্রয়োজনের তুলনায় কম অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং এর দাম কিছুটা ব্যয়বহুল হওয়ায় সব পরিবারের পক্ষে যোগাঢ় করা সম্ভব হচ্ছে না। খুলনাবাসীর এমন প্রতিকূল অবস্থায় তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন শেখ পরিবারের সদস্যরা।
সম্প্রতি করোনা রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে আনা-নেওয়ার জন্য দুটি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করেছেন খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। আর সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন সেই অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে দুটি অক্সিজেন ব্যাংক চালু করেছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিসিবি’র পরিচালক শেখ সোহেল। খুলনা মহানগর যুবলীগ ও মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সার্বক্ষণিক এগুলো মনিটরিং করছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, করোনা রোগীদের দিনরাত ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা মেটাতে ১২ জুন ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করেন সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। পরবর্তীতে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ২৮ জুন আরও একটি অ্যাম্বুলেন্স চালু করা হয়। অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত রয়েছেন মহানগর যুবলীগের সদস্য শেখ মোহাম্মদ আলী। শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের সুবিধা নিয়েছেন ৯ জন রোগী। জরুরি প্রয়োজনে +৮৮০১৯৪৯৮৮৩৭৭৩ নম্বরে ফোন করলেই অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের সেবা পাওয়া যাবে। এদিকে গত ২৯ জুন সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ শেখ আবু নাসের অক্সিজেন ব্যাংক ও ৩০ জুন সকালে শেখ সোহেল অক্সিজেন ব্যাংক যাত্রা শুরু করে। শেখ আবু নাসের অক্সিজেন ব্যাংক তদারকি করছেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নগর শাখা। এখন পর্যন্ত এখান থেকে সেবা নিয়েছেন ১০ জন রোগী। আর শেখ সোহেল অক্সিজেন ব্যাংক তদারকি করছেন নগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এখান থেকে এ পর্যন্ত ১৭ রোগীর বাসায় অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, গত দু’দিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও অক্সিজেন ব্যাংকে নিয়োজিত কর্মীরা করোনা রোগীদের পাশে রয়েছেন। দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় অফিসের নির্ধারিত নম্বরে ০১৪০৩-৪৭৭০৯৭ ফোন করে সহযোগিতা চাইলে মুহূর্তের মধ্যে চাহিদা মেটানো হবে। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও অক্সিজেন ব্যাংকের জন্য আলাদা হটলাইন নম্বরও রয়েছে। যা ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্যানায় টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। উক্ত নম্বরে ফোন করলেও সেবা পাবেন রোগী কিংবা তার পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে খুলনা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. মশিউর রহমান সুমন দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই অক্সিজেন সংকটের কথা লিখছেন। তবে এই মুহূর্তে খুলনায় কোন অক্সিজেন সংকট নেই। শেখ পরিবারের মানবিক উদ্যোগে দুটি অক্সিজেন ব্যাংক সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। বৈরি আবহাওয়াতেও কর্মীরা ছুটে বেড়িয়েছেন। জরুরি অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে নগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।’
খুলনা মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা মহামারিতে খুলনাবাসীর সেবায় ত্রাণ সহায়তা, চিকিৎসা সহায়তা ও নগদ অর্থ সহায়তা থেকে শুরু করে সব ধরণের মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল ও শেখ সোহেল। বর্তমানে করোনার সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী হওয়ায় দুটি অক্সিজেন ব্যাংক চালু করা হয়েছে। এর সাথে দুটি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসও রয়েছে। কর্মীরা প্রতিনিয়ত বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।’
মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক সফিকুর রহমান পলাশ দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে জানান, ‘করোনায় আক্রান্ত রোগীরা যাতে জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে যেতে পারে সেজন্য অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস অনাবরত কাজ করছে। একই সাথে অক্সিজেন সমস্যা যাতে মেটানো সম্ভব হয় এজন্য দুটি অক্সিজেন ব্যাংক কাজ করছে। হটলাইন কিংবা অফিসের নম্বরে ফোন করলেই এসব সেবা পাওয়া যাবে।’
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়