খুলনায় করোনা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা
জয়নাল ফরাজী…
খুলনায় খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) আরটি-পিসিআর ল্যাবে একদিনে সর্বোচ্চ ৩৫ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে খুলনা জেলার ৩০ জন রয়েছেন। বিশেষ করে বলতে মহানগরীরই ২৮ জন। যার ফলে খুলনায় এখন পর্যন্ত ১৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, খুলনার প্রায় সব এলাকাতেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে খুলনায় করোনা পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, খুলনায় এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে বৃহস্পতিবার। প্রায় সব এলাকাতেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনা রোগী। এ নিয়ে মোট ১৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। আর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩৩ জন।
তিনি আরও জানান, সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অহেতুক ঘোরাঘুরি করলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। লকডাউন ছেড়ে দেওয়ার কারণে অনেকে বাইরে থেকে এসে তথ্য গোপন করে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে, তারা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন না। ফলে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এজন্য করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা রয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সি রেজা সেকেন্দার বলেন, আমাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে পরীক্ষা করেও রোগীকে ফলাফল দিতে বিলম্ব করে ফেলছি। এতে তো করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। করোনা পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করছি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পিসিআর ল্যাব রয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে বারবার করোনা পরীক্ষার জন্য অনুরোধ করেছি। তবে তারা কোব ভাবেই এটা আমলে নিচ্ছেন না।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, আমাদের পিসিআর মেশিন আছে। তবে সেটা রিয়েল টাইম পিসিআর মেশিন নয়। তাতে পরীক্ষা করতে অনেক সময় লেগে যায়। ৪ থেকে ৫ দিনও লাগতে পারে। তবে আমরা চেষ্টা করছি একটি রিয়েল টাইম পিসিআর মেশিন কিনে ল্যাব তৈরি করার। যাতে এসময়ে করোনা মোকাবেলাসহ ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে লাগে। আমরা খুব শীঘ্রই এবিষয়ে সিন্ডিকেটে মিটিং করে ল্যাব তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করবো।
এরআগে বৃহস্পতিবার রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে জানান, বৃহস্পতিবার খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর মেশিনে মোট ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে খুলনা জেলার নমুনা ছিলো ১৪১টি। এদের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ ৩৫ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। যার মধ্যে ৩০ জনই খুলনার জেলার। বাকিরা যশোর ও ঢাকা জেলার।
তিনি আরও জানান, খুলনায় আক্রান্তদের মধ্যে ২৯ জনই মহানগরীর বাসিন্দা, একজন পাইকগাছা উপজেলার। মহানগরীতে আক্রান্তদের মধ্যে বিভিন্ন এলাকার নানা পেশার মানুষ রয়েছেন। বিশেষ করে একজন চিকিৎসক, দুইজন পুলিশ সদস্য, একজন কারারক্ষী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন।
ডা. মেহেদী নেওয়াজ জানান, খুলনায় নতুন শনাক্ত হওয়া ৩০ জনের মধ্যে রয়েছেন- খুলনা মেডিকেল কলেজের গাইনী বিভাগের ৫৮ বছর বয়সী একজন প্রফেসর, সোনাডাঙ্গা ময়লাপোতার রাহেলা বস্তির এলাকার ৬০ বছরের বৃদ্ধা, খালিশপুরের মোস্তফার মোড়ের ২৪ বছরের নারী ও ৩৫ বছরের এক ব্যক্তি, সোনাডাঙ্গার হাজী ইসমাইল লিংক রোডের ৩২ বছরের ব্যক্তি, গোবরচাকা মেইন রোডের ৪৫ বছরের ব্যক্তি, খুলনা মেডিকেল কলেজের ৫২ বছরের স্টাফ, বানিয়াখামার এলাকার ৪৮ বছরের ব্যক্তি, খুলনা জেলা পুলিশের ১৯ বছরের নারী সদস্য, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ২৮ বছরের নারী, সোনাডাঙ্গার ছোটবয়রাস্থ শান্তিনগর এলাকা সাড়ে ৬ বছরের শিশু, খালিশপুর মুজগুন্নি এলাকার ৫০ বছরের ব্যক্তি, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৪২ বছরের একজন, সোনাডাঙ্গার নাসির সড়কের ৬২ বছরের একজন, ছোটবয়রা এলাকার ২২ মাসের শিশু, ছোটবয়রা শান্তিনগর এলাকার ৫৮ বছরের নারী, সদর থানাধীন ইকবালনগরের ৩৫ বছরের একজন, সোনাডাঙ্গার ফজলা রহমান রোডের ৩২ বছরের ব্যক্তি, খালিশপুরের এক ব্যক্তি, সিএন্ডবি কলোনীর ৪০ বছরের একজন, জেলা কারাগারের ২৬ বছরের নারী কারারক্ষী, রূপসা উপজেলার শিরগাতি গ্রামের ৪২ বছরের এক ব্যক্তি, সোনাডাঙ্গা থানাধীন বয়রা এলাকার ৩৩ বছরের এক ব্যক্তি, পাইকগাছা উপজেলার ৫১ বছরের একজন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৩ বছরের এক ব্যক্তি, সদর থানাধীন হাজী মুহসিন রোডের ৪১ বছরের নারী, খুলনা সিডিসির ৩৭ বছরের নারী, টুটপাড়া এলাকার ৪৩ বছরের এক ব্যক্তি, হরিণটানা এলাকার এক ব্যক্তি, খুমেকের ফ্লু কর্নারে চিকিৎসাধীন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এক ব্যক্তি।