November 25, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

খুলনায় এসআই সোবহান মোল্লার বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা যৌতুক গ্রহণের অভিযোগ

দ. প্রতিবেদক
খুলনা সদর থানার এসআই সোবহান মোল্লার বিরুদ্ধে প্রথম বিয়ে গোপন করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে দ্বিতীয় বিয়ে, প্রমোশনের নামে ২০ লাখ টাকা যৌতুক গ্রহণ, আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক না দেওয়ায় অব্যাহত নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। রবিবার দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দ্বিতীয় স্ত্রী ফারজানা বিনতে ফাকের (ক্ষমা) তার পুলিশ স্বামী সোবাহানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের বিশাল ফিরিস্তি তুলে ধরেন। এ সময় সঙ্গে ছিল তার ৮ মাসের শিশু পুত্র ইসতাইন সময়। তিনি নগরীর মজিদ স্মরণী বাইলেন এলাকার মো. ফাকের ইবনে সামাদের কন্যা।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, এসআই সোবহান মোল্লা সোনাডাঙ্গা থানায় কর্মরত থাকাকালীন এসব অপকর্ম করলেও বারবার ওই থানার ওসি তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। তার অপরাধ ধামাচাপা দিয়ে মিমাংসার নামে উল্টো তাদেরকে আইনের আশ্রয় নেয়া থেকে বিরত রেখেছেন। এমনকি থানায় মামলা করতে গেলেও না নিয়ে বারবার তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে ন্যায় বিচার পেতে বাধ্য হয়ে তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে দু’টি মামলাও দায়ের করেছেন। কিন্তু দু’ মামলার আসামি হয়েও বহাল তবিয়তে রয়েছে এসআই সোবাহান। উল্টো তার বাবাকে (শ্বশুর) দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির মামলা সাজানো হয়েছে। সোবহান মোল্লা মাগুরা জেলা সদরের ২০নং চন্দনপ্রতাপ গ্রামের আব্দুস সবুর মোল্লার পুত্র।
ফারজানা বিনতে ফাকের অভিযোগ করেন, এসআই সোবহান মোল্লা সোনাডাঙ্গা থানায় কর্মরত থাকাকালীন তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১২ মে তাকে প্রলুব্ধ করে নগরীর ১৮নং ওয়ার্ডের কাজী অফিসে নিয়ে ৩ লাখ টাকা দেন মোহর নির্ধারণ করে বিয়ে করেন। কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন সোবহান মোল্লার প্রথম স্ত্রী ও দু’টি সন্তান রয়েছে। তখন তিনি এমএম সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ায় তার প্রতারণার বিষয়টি তিনি ধরতে পারেননি। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে তার ওপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে এসআই সোবহান মোল্লা তাকে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা দেন। এ কারণে তিনি মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে ২০২০ সালের ৩ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এমনকি তাদের বিয়ের প্রমাণ নষ্ট করতে তিনি রেজিস্ট্রার দেখার অজুহাতে ১৮নং ওয়ার্ডের কাজী অফিসে গিয়ে রেজিষ্ট্রারের ৬নং ভলিয়মের ১৪নং পাতা ছিড়ে ফেলেন। প্রতিবাদ করলে নিকাহ রেজিষ্ট্রারকে (কাজী) জীবন নাশের হুমকি দেন। এ বিষয়ে কাজীর সহকারী সোনাডাঙ্গা থানায় জিডি করতে গেলে তা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে কাজী খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। যদিও থানার ওসির মধ্যস্থতায় ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর আবারও তাদের বিয়ে রেজিষ্ট্রি করা হয়।
স্ত্রী ফারজানা বিনতে ফাকের আরও অভিযোগ করেন, তার সুখের জন্য পিতা-মাতা ৫ লাখ টাকার মালামাল দেয়। কিন্তু তারপরও এসআই সোবহান ইন্সপেক্টর হিসেবে প্রমোশনের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষের ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। মেয়ের সংসারের সুখের জন্য তার পিতা দু’ দফায় ১০ লাখ করে তাকে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দিতে বাধ্য হন। এরপরও তার কাছে আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করা হয়। কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে আরও যৌতুক দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় বিভিন্ন সময় তাকে নির্যাতন করা হয়। এমনকি কোলের শিশু পুত্রের দুধ কিনে দেওয়ার কথা বলে সোনাডাঙ্গা থানায় ডেকে নিয়েও তাকে পিস্তল দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাঁটিয়ে দেওয়া এবং আসামি পেটানোর লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। এতে তার মাথায় ১২টি সেলাই দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন ফারজানা বিনতে ফাকের।
এসব ঘটনায় তিনি স্বামী এসআই সোবহানের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। এ খবর জানতে পেরে ওইদিনই সোবাহান পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং তার পিতার কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। না দিলে হুমকি দেয়। এ ঘটনায়ও তিনি ২৭ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর হাকিমের আমলী আদালত সোনাডাঙ্গায় মামলা দায়ের করেন। এ অবস্থায় তিনি মামলা তদন্তে পুলিশের অবৈধ প্রভাব বিস্তার এবং তাকে ও তার মা-বাবাকে হুমকি দিচ্ছেন এবং ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। ফলে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেসলনে তিনি স্ত্রী-সন্তানের অধিকার, নিরাপত্তা এবং ন্যায় বিচার দাবি করেন। এ বিষয়ে তিনি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

‌দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *