খুলনায় এক সপ্তাহে ৪ ধর্ষণ, বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
এবার ৯ বছরের শিশু ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ সদস্য গ্রেফতার
জয়নাল ফরাজী
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুলনা জেলা ও মহানগরীতে ৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে খালিশপুরে একটি, ডুমুরিয়ায় দুটি ও তেরখাদায় একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরপর ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। এদিকে ৪টি ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজের নেতারা। তারা শিশু ধর্ষণ মামলা দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে ডুমুরিয়া ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে একই জুট মিলে চাকরি করার সুবাদে জনৈক ব্যক্তির বাড়িতে বেড়াতে এসে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে এক জুট মিল শ্রমিক। এই ঘটনায় পুলিশ রেজাউল মোড়ল ও আব্দুর রব মোড়লকে গ্রেফতার করে। তারা ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। এ মামলার অপর দুই ধর্ষক এখনও পলাতক।
গত রবিবার জনৈক নারী তার দেবরকে সাথে নিয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা গ্রামে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে তারা ধামালিয়া ইউনিয়নের বরূনা গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখানে গেলে স্থানীয় মেম্বর মো: নুর ইসলাম ও মাহবুর রহমান মোল্লাসহ কয়েকজন ওই গৃহবধূর দেবরকে মারপিট করে। তারা ওই নারীকে নুর ইসলামের বাড়ির কিছু দুরে বাগানের মধ্যে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ঘটনা কাউকে না বলতে ধর্ষকেরা হুমকি দেয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ বৃহস্পতিবার ধর্ষক মাহবুর মোল্লাকে আটক করে। এ ঘটনায় ধর্ষিতা নারী বাদী হয়ে ইউপি মেম্বর নূর ইসলাম, যুবলীগ নেতা মাহবুর মোল্লাসহ ৪ জনের নাম ও অজ্ঞাত একজনকে আসামি করে মামলা করেন।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে খুলনার খালিশপুরের মুজগুন্নী এলাকার রাজন (৩০), রসুল (২৬) ও সোহাগ (৩০) এক দিনমজুরের ভাড়া বাসায় জোরপূর্বক প্রবেশ করেন। এ সময় ওই দিনমজুর, তাঁর স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ে ঘুমাচ্ছিল। একপর্যায়ে রাজন ও তাঁর দুই সহযোগী ওই দিনমজুরের বাসার সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাঁর মেয়েকে বাইরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ সময় তাঁরা ওই দিনমজুর ও তাঁর স্ত্রীকে মারধরও করেন। এ ব্যাপারে বুধবার সকালে ওই দিনমজুর খালিশপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে।
সর্বশেষ খুলনার তেরখাদা উপজেলায় চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী (৯) ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার মধুপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। ওই শিশু বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ মামলায় পুলিশ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের মোকামপুর গ্রামের রেজাউল ইসলামকে (২২) গ্রেফতার করেছে। রেজাউল ইসলাম নাটোর পুলিশ লাইনসে পুলিশ সদস্য হিসেবে কর্মরত।
তেরখাদার ওই শিশুর বাবা বলেন, রেজাউল পুলিশের একজন কনস্টেবল। নাটোরে চাকরি করেন। বছর তিনেক হয়েছে চাকরি পেয়েছেন। এখন ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। তাঁর মেয়ে রেজাউলের বাড়ির পাশের ঘেরের পাড়ে বেলা ১১টার দিকে কদম ফুল পাড়তে যায়। সে সময় ফুল পাড়তে সহায়তার কথা জানান রেজাউল। পরে তিনি ফুঁসলিয়ে মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে মেয়ে বাড়িতে এসে তার মাকে সব ঘটনা খুলে বলে।
তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি চলতি দায়িত্ব) স্বপন কুমার রায় বলেন, অভিযুক্ত রেজাউলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি নাটোর পুলিশ লাইনসে পুলিশ সদস্য হিসেবে কর্মরত। ওই শিশুকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত চলছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসির সমন্বয়ক চিকিৎসক অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বলেন, শিশুটিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে এখনো তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে। শিশুটি শঙ্কামুক্ত নয়।
এ বিষয়ে জনউদ্যোগ, খুলনার সদস্য সচিব মহেন্দ্রনাথ সেন বলেন, ‘নারী ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে কঠোর আইন করতে হবে। সেই সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। বিশেষ করে শিশু ধর্ষণ মামলা দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ