খুলনায় অদক্ষ, লাইসেন্সহীন চালকের হাতে মোটরসাইকেল: প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা
নাগরিক সমাজের উদ্বেগ, আরও কঠোর হচ্ছে পুলিশ
জয়নাল ফরাজী
খুলনা অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্ক, লাইসেন্সহীন চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ঈদের আগের দিন থেকে মোটরসাইকেলের কারণে দুর্ঘটনায় পরে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত চারজনের। আর আহত হয়েছেন ৩০-৩৫ জন। চালকের আসনে কিশোররা থাকায়, তাদের বেপরোয়া গতি কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজ। আর লাইসেন্সহীন মোটরসাইকেল ও চালকদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ।
জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই (শুক্রবার) দিঘলিয়ার দেয়াড়া খেয়াঘাট চৌরাস্তা মোড় ঘুরে পায়ে হেটে নিজ বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন জিন্নাত শেখ (৭০)। পেছন থেকে আসা দ্রুতগামী মোটরসাইকেল চালক তাকে সজোরে আঘাত করলে পিচ রাস্তায় ছিটকে পড়ে শরীর ও মাথার একটি অংশ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন জিন্নাত শেখকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাকে দাফন করা হয় বলে জানা যায়। এছাড়া ঈদের দিন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন, যার বেশিরভাগই কিশোর ও তরুণ। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ এ তথ্য জানা গেছে। এছাড়া গত ৬ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) খুলনা মহানগরীর বয়রা এলাকায় একটি দ্রুতগামী মোটরসাইকেলকে সাইড দিতে গিয়ে ট্রাকের চাপায় মৃত্যুবরণ করেন প্রতিবন্ধী ইজিবাইক চালক মফিদুল ইসলাম। এ ঘটনায় ইজিবাইকের দুই আরোহী স্বামী-স্ত্রী গুরুতর আহত হয়ে খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে গত রবিবার রাতে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাটকেলঘাটা থানাধীন মির্জাপুর এলাকায় খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের হিসাবরক্ষক রোকনুজ্জামান লিটু ও ইনস্ট্রুমেন্ট কেয়ার টেকার সাকিব হোসেন নিহত হয়েছেন।
পাটকেলঘাটা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুব্রত জানান, মির্জাপুর বাজারের কিছু সামনে শ্মশান ঘাট এলাকায় একটি ট্রাক দাঁড়িয়েছিল। এ সময় সাতক্ষীরাগামী একটি মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে ছুটে এসে ট্রাকটির সাথে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী দুজন মাথায় আঘাত লেগে মারা যান। পরে পাটকেলঘাটা থানা পুলিশ মরদেহ ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করে খর্ণিয়া হাইওয়ে থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে।
তিনি আরও বলেন, মোটরসাইলেকের চালক ছিলেন সাকিব হোসেন। তার মাথায় মারাত্মক জখম হয়েছে। তাদের পকেট সার্চ করে কোন ধরনের কাগজপত্র বা ড্রাইভি লাইসেন্স পাওয়া যায়নি।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) খুলনা মহানগর শাখার আহ্বায়ক এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে বলেন, কিছুদিন আগেও লাইসেন্সহীন চালক ও মোটরসাইকেল ধরতে পুলিশের ব্যাপক অভিযান ছিল। সেসময় তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা যেত। হঠাৎ করে কড়াকড়ি কমে যাওয়ায় কিশোর ও তরুণরা বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। যেটি খুবই উদ্বেগজনক। এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য আবারও অভিযান পরিচালনা করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, দেশে নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাশ হলেও তার কোন বাস্তবায়ন এখনও পর্যন্ত শুরু করা হয়নি। করোনা মহামারীর কারনে বর্তমানে ট্রাফিক বিভাগের শিথিলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এছাড়া অদক্ষ চালক, ড্রাইভিং লাইসেন্সহীন অনেকে ট্রাফিক জ্ঞানের অভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকে। অবিলম্বে নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করা জরুরী। সেই সাথে এই আইনের কোন অপপ্রয়োগ যাতে না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) এর উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু পরিচালনায় কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিলো। যার কারণে অনেক বিষয় ওভারলুক হয়েছিলো। তবে গত সপ্তাহ থেকে আবারও কঠোরভাবে এগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিআরটিএ থেকে নতুন করে কাউকে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না। ফলে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হচ্ছে। তবে হেলমেট ছাড়া বর্তমানে নগরীতে কোন মোটরসাইকেল চলতে দেয়া হচ্ছে না। অপ্রাপ্তবয়স্করা যাতে মোটরসাইকেল চালাতে না পারেন সেজন্য আরও কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। সোমবারও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও চালকদের আটক করা হয়েছে। এছাড়া এদিন এক কিশোর বিকট শব্দ করে রেসিং কার চালিয়ে যাওয়ায় সেটিও আটক করা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ