খুলনাসহ সীমান্তবর্তী সাত জেলায় কঠোর লকডাউনের সুপারিশ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ভারত সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আরও সাতটি জেলায় লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারির সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন রবিবার এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তের আরও সাতটি জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করেছে কমিটি। এই জেলাগুলোতে সংক্রমণ উধ্বমুখী। আজ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
কমিটির একজন সদস্য বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে আগেই অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শনিবার কমিটির বৈঠকে নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলাও ‘লকড ডাউন’ করার সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটি তাদের এই সুপারিশ চিঠি দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানাবে। রবিবারই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানান কমিটির ওই সদস্য।
তিনি বলেন, ওইসব জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তীব্রভাবে বেড়ে যাচ্ছে। লকডাউনের সময় বাস চলাচল যেন বন্ধ থাকে, এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যেন বাস না চলে – সে বিষয়ে জোর দিতে বলা হয়েছে সুপারিশে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২৪ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউনের বিধিনিষেধ জারি করে জেলা প্রশাসন, যা এখনও চলছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতে উদ্ভূত ধরনটি পাওয়া গেছে, যারা কখনও প্রতিবেশী ওই দেশটিতে যাননি।
এর মানে হল, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক এই ধরনটির কমিউনিটি সংক্রমণ ঘটছে। করোনাভাইরাসের এ ধরনটির আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়েছে বি.১.৬১৭। মিউটেশনের কারণে এর তিনটি ‘সাব টাইপ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া গেছে বি.১.৬১৭.২ ধরনটি। ইতোমধ্যে অন্তত চার ডজন দেশে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক এ ধরনটি ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরনটিকে চিহ্নিত করেছে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ (ভিওসি) হিসেবে।
ভারত থেকে আসা তিন বাংলাদেশির দেহে করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের কথা গত ৮ মে প্রথম জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশে এ পর্যন্ত ২৩ জনের শরীরে পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসের এই ধরনটি। গত শনিবার পর্যন্ত দেশে ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৩৮৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১২ হাজার ৫৪৯ জন।
এদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, পরিস্থিতি বুঝে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। গতকাল রবিবার করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানোর আদেশের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এই কথা বলেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর ওপর আমরা বিশেষ নজর রেখেছি, যদি সেখানে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, ওই জায়গাগুলোতে চলাফেরার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারব। বিষয়গুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউনের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের বিষয়টির আশঙ্কা থেকেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সেটা আমরা করছি। সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলার স্থানীয়ভাবে বিধিনিষেধ দেয়ার বিষয়ে প্রস্তাব এসেছে, আমরা সেটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। সেই বিষয়ে আমরা হয়তো জানাব, কী করা যেতে পারে। সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, যশোর ও নাটোরের বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।’
বর্তমানে দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার ১০ শতাংশের বেশি; সরকার এই হার ৫ শতাংশের কাছাকাছি নিয়ে আসার চেষ্টা করছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘৫ শতাংশে নেমে এলে ধরে নেয়া হয়, পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নয়। আমরা সেই রকম অবস্থায় দিকে নিতে চাই।’
লকডাউন আরও বাড়বে কি না জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাইছি ৫ শতাংশ আসার পরে। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ রেখেছি। তাতে করে মানুষের চলাচলের প্রয়োজনীয়তা বা বাধ্যবাধকতা নাই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ৫ শতাংশের মধ্যে থাকাটা স্বস্তিদায়ক।’
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়