খুলনার চার উপজেলার বেড়িবাঁধে ভাঙন আতংক, স্বেচ্ছাশ্রমে রক্ষা
দ: প্রতিবেদক
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ফণা তুলে খুলনায় আঘাত হানতে না পারলেও বিপদ যেন পিছু ছাড়ছে না উপক‚লীয় এলাকার মানুষদের। বিশেষ করে চার উপক‚লীয় উপজেলা বটিয়াঘাটা, দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছার সাধারণ মানুষ রয়েছেন ভাঙন আতংকে। গত দুই দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কাজ করে কোন রকম রক্ষা পাচ্ছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা পুরাতন ফেরীঘাট সংলগ্ন শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। দাকোপ উপজেলায় রিং বাঁধ ভেঙে দু’টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কয়রায় ঘাটাখালি, ঘোগড়া, হরিণখোলা এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।
আমাদের বটিয়াঘাটা প্রতিনিধি পরিতোষ রায় জানান, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ফণীর ফণায় ভংঙ্কর ছোবলে জলমা পুরাতন ফেরীঘাট সংলগ্ন শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে। কাজীবাছা নদীর স্রোতের তোড়ে শহর রক্ষা ভেড়িবাঁধে দুই তৃতীয়াংশ ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। জলমা ইউনিয়নের বিশিষ্ট দানবীর ও সমাজ সেবক আলহাজ্ব আসলাম তালুকদারের নিজেস্ব অর্থায়নে প্রায় লক্ষাধিক টাকার বাঁশ ও চালি দিয়ে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে গত দুই দিন ধরে কাজ করে কোন রকম রক্ষা পেয়েছে জলমা ইউনিয়নে ২৯টি গ্রাম ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই গাইন, নবনির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান চঞ্চলা মন্ডল, জলমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আশিকুজ্জামান আশিক, প্যানেল চেয়ারম্যান বিপ্রদাস টিকাদার কার্তিক, মহিলা ইউপি সদস্য তপতী বিশ্বাস, নারী নেত্রী মমতা মল্লিক, পঙ্কজ গোলদার সহ কৈয়া পানি ব্যবস্থপনা সমিতির সভাপতি অনন্ত কুমার রায়, সধারণ সম্পাদক দেবাশীষ রায়, কোষাধাক্ষ্য সুজয় মন্ডল,বিশ্বজিৎ মল্লিক প্রমূখ। এছাড়া খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ জিয়াউর রহমানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সমিতির কর্মকর্তাবৃন্দ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শহর রক্ষা বেড়িবাঁধটি এ দুই দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সংস্কার করলেও এখনও পর্যন্ত শঙ্কামুক্ত হয়নি। অপরদিকে ফণীর ফণার আঘাত থেকে রক্ষা পেতে নদী উপকূলীয় লোকজন সাইক্লোন সেল্টারের বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নিলেও সরকারিভাবে কোন খাবার সরবরাহ করে নাই বলে জানা যায়।
উপজেলার নদী উপকুলে ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়ীবাঁধ গুলো মধ্যে শিয়ালীডাঙ্গা, বারোআড়িয়া, রায়পুর ঋষি বাড়ির মোড়, দ্বীপ-বরণপাড়া, বরইতলাসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহমেদ জিয়াউর রহমান। এ সময় এলাকাবাসী ঝুকিপূর্ণ ভেড়ীবাঁধগুলো রক্ষার্থে স্থায়ী সমাধান চেয়ে জোর দাবী জানান। এদিকে ফনীর ভংঙ্কর ছোবলে মল্লিকের মার্কেটে বাসন্তি ফার্মেসি ও আ’লীগ অফিসে টিনের চাল সহ উপজেলার প্রায় ৯৫০টি কাঁচা পাকা ঘর সম্পূর্ণ রুপে ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানা যায়।
আমাদের দাকোপ প্রতিনিধি রুহুল আমিন জানান, ফণী আতংক শেষ হলেও বিপদ যেন পিছু ছাড়ছে না দাকোপের বানীশান্তা এলাকার মানুষের। ফের ভাঙনে ভেসে গেছে সেখানকার ওয়াপদা বেড়িবাঁধ। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রান সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার বেলা ১১টার দিকে পশুর নদীর জোয়ারের পানির চাপে পাশাপাশি পৃথক ৪টি স্থানে ফের ভেঙে গেছে দাকোপের বানীশান্তা বাজার এলাকার আনুমানিক ১৫০ ফুট বেড়িবাঁধ। এ নিয়ে গত ১ সপ্তাহে তৃতীয় বারের মত ভেঙে গেল সেখানকার বেড়ীবাঁধ। বাজার এলাকার সকল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং কয়েক শ’ পরিবার সেখানে পানিবন্দি দূর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নদীতে জোয়ার থাকায় বাঁধ সংস্কারে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
গতকাল দাকোপ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিবৃন্দ ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন। নদীতে ভাটা শুরু হলে বাঁধ মেরামতের সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এমন দাবী উপজেলা প্রশাসনের। উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহে ফণী আঘাত হানার দিন এবং তার ২ দিন আগে একই স্থানের বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ ৫ শ’ পরিবারকে ত্রান সহায়তা হিসেবে গতকাল দাকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল ওয়াদুদ এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শেখ আব্দুল কাদের পরিবার প্রতি ৫ কেজি চাল, ডাল, তৈল, লবন, চিনি, ম্যাচ, মোমবাতি, বিস্কুট, চিড়া ও মুড়ি প্রদান করে। গতকাল বেলা ১টার দিকে বানীশান্তা ইউপি সদস্য ফিরোজ খানের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণের মালামাল হস্তান্তর করা হয়।