November 24, 2024
আঞ্চলিক

খুলনার কয়রার দক্ষিণ বেদকাশিতে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন : ‌সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে বাঁধ নির্মাণসহ ৭ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবনঘেঁষা দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে নদীশাসন ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে সেনাবাহিনীর তত্তাবধায়নে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ ৭ দফা দাবি তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী।

বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব দাবি উপস্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ভাঙন কবলিত এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গোলখালী গ্রামের টিএম আমিরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম নূর।

প্রতিবছর বেড়িবাঁধ ভাঙনের ফলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবার শঙ্কা প্রকাশ করে অবিলম্বে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

দাবিসমূহ হল- অবিলম্বে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের তিন পার্শ্বের শাখবাড়িয়া ও আড়পাঙ্গাশিয়া নদী এবং কপোতাক্ষ নদে নদীশাসন ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা, উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত সকল বেড়িবাঁধ সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্তাবধানে নদীশাসন ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্তদের জলবায়ু ও পুনর্বাসন তহবিলে সরকারি বিশেষ বরাদ্দে গৃহনির্মাণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, সাতক্ষীরা পওর ১৩, ১৪/১ ও ১৪/২নং পোল্ডার খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও পাকাকরণ, স্কুল-মাদ্রাসা ও ক্ষতিগ্রস্ত ধর্মীয় উপাসনালয় মেরামত করা, প্রতিটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং প্রকল্পের সার্বিক বিবরণী টাঙানো বাধ্যতামুলক করা এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণে ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব চরম অবহেলা এবং আর্থিক অসাধুপায় অবলম্বনের অভিযোগ উঠলে বিচার বিভাগীয় তদন্তসাপেক্ষে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, আড়পাঙ্গাশিয়া ও শাকবাড়িয়া নদী এবং কপোতাক্ষ নদে বেষ্ঠিত প্রায় বদ্বীপ ভূ-খন্ড দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নটি। পাকা রাস্তাবিহীন (সমগ্র এলাকায় একটি পিচের রাস্তা নেই) অবহেলিত এ ভূ-খন্ডে বসবাসরত প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ নোনাপানিতে নিমজ্জিত।

সর্বশেষ গত ১৪ আগস্ট চরামুখায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তৃণ এলাকা তলিয়ে গেছে; এখনো চলছে জোয়ার-ভাটা। মাসখানেক আগেও একইস্থানে বেড়িবাঁধটির তিনশ’ মিটার দৈর্ঘ্যে ভেঙেছিল, যা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মেরামত করেছেন স্থানীয়রা। বেড়িবাঁধটি ভাঙনের পর প্রায় একমাস সময় পেলেও বিপুল জনগোষ্ঠির সুরক্ষায় বেড়িবাঁধ সংস্কার বা মেরামতে এগিয়ে আসেনি নিষ্ঠুর সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। খুলনার অন্তর্গত কয়রা উপজেলাধীন দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নটি সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন হওয়ায় সেই ষাটের দশক থেকেই বিমাতাস্বরূপ আচরণে টেকসই বেড়িবাঁধ নিরাপত্তা বঞ্চিত এলাকাবাসী। তাই অবিলম্বে নদীশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মধ্যদিয়ে ব-দ্বীপ ভূÑখন্ড দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অতিদ্রুত নদীশাসন ব্যবস্থা সহকারে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না গেলে, ‘বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে আমাদের জন্মস্থান প্রিয় দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নটি’। একই সাথে সাতক্ষীরা পওর’র ১৩, ১৪/১ ও ১৪/২নং পোল্ডারটি খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় আনতে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, গত ১৪ আগস্ট সকালে চরামুখা খালেরগোড়া নামক স্থানে কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়; ১৫, ১৬ ও ১৭ আগস্ট ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক অনাহারী মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে প্রাণপন চেষ্টা করেও জনপদে নোনা পানির জোয়ার-ভাটা চলে। বুধবার স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রিং বাঁধ দিয়ে জোয়ার-ভাটা আটকানো সম্ভব হয়েছে। গত ১৭ জুলাই কপোতাক্ষ নদের একই স্থানে বেড়িবাঁধের মাত্র তিনশ’ মিটার নদীগর্ভে বিলিন হয়ে অন্তত পাঁচটি গ্রাম নোনাপানিতে নিমজ্জিত হয়। পরদিন ১৮ জুলাই পাঁচ সহস্রা‌ধিক মানুষ, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধের ভিতর দিয়ে রিং বাঁধ নির্মাণ করে লোকালয়ে জোয়ার-ভাটা বন্ধ করে দেয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়-পাঁচটি গ্রামের অন্তত বিশ সহস্রা‌ধিক মানুষ, ভেঙে গেছে বহু মানুষের বসতঘর, ভেসে গেছে মৎস্যঘের-মাছের পুকুর, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমগ্র ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাট। আর বর্তমান অবস্থা আরও শোচনীয়। মৎস্য ঘের-মাছের পুকুর ভেসে গেছে সব, তলিয়ে যায় অধিকাংশ গভীর নলকূপ ও মিঠাপানির পুকুর, বসত ঘর-বাড়িতে জোয়ার-ভাটা চলছে, অপেক্ষাকৃত উঁচুস্থানে ও আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে কোনোমতে দু’বেলা, দু’মুঠো খেয়ে-না খেয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে দিনাতিপাত করছে দক্ষিণ বেদকাশিবাসী। দক্ষিণ বেদকাশির ৫ হাজার ৯৭১ একর আয়তনের প্রতি ইঞ্চিতে এখন নোনাপানিতে বিষাক্ত হয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় গৃহপালিত পশু-পাখির মরদেহ ও মাছ পঁচা দুর্গন্ধে নিঃশ্বাস ভারিয়ে হয়ে আসছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। দেখা দিয়েছে চর্মরোগসহ নানান ব্যাধি।

বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ না থাকলেও শত শত কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সুরক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। এসব বরাদ্দ কিভাবে আসে, আর কিভাবে যায়? তার কিছুই জানেন না উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত বিশাল জনগোষ্ঠি। তারা শুধু জানে- বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতেই বাঁধ রক্ষা করতে হয়; তা না হলে পানি তোড়ে ভেসে যাবে মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁইটুকুও। কখনোই, কোন বেড়িবাঁধ সংস্কার বা মেরামত স্থলে বেড়িবাঁধ প্রকল্প বিবরণী টাঙানো হয় না। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে গভীর যোগসাজশে স্বার্থন্বেষী ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধিরা ‘ঘোলাজলে মাছ শিকার’ করে। বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে তাই কতিপয় মানুষরূপী ‘সাপ-ব্যাঙ’ মনে-মনে খুশিই হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নটি। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারাবে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মামুনুর রশীদ সোহেল, আলহাজ্ব মোঃ কবিরুল ইসলাম, মোঃ আসমাউল হোসাইন সোহাগ, মোঃ জামাল হোসেন, মোঃ মাকসুদ আলম, মোঃ ইমরান খান, মোঃ আমীর হামজা, আলমগীর হোসেন মুন্না, আসাদুল ইসলাম ও সোহেল হোসেন প্রমুখ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *