খুলনাজুড়ে রোহিঙ্গা-ছেলেধরা আতঙ্ক
* দু’দিনে পাঁচজনকে পুলিশে সোপর্দ
* পরিচয় সনাক্ত চলছে
জয়নাল ফরাজী
খুলনা জেলার পর এবার নগরীতেও রোহিঙ্গা-ছেলেধরা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছেলেধরার এই গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। গুজব উঠেছে, রোহিঙ্গারা শিশুদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা এলাকায় অপরিচিত লোক দেখলেই ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করছে।
গত দু’দিনে নগরী থেকে রোহিঙ্গা সন্দেহে অন্তত পাঁচজনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। যদিও পুলিশ বলছে, ছেলেধরা নিছক গুজব। মানসিক প্রতিবন্ধী, অপরিচিত লোকজনের এলাকায় এলোমেলো চলাফেরা দেখলেই গণধোলাই দেয়া হচ্ছে। যা দুঃখজনক। যদি ছেলেধরা হয়েও থাকে, এভাবে মারপিট করা ঠিক না। তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করা হোক।
জানা যায়, কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এলাকায় গুজব ছড়ানো হয়েছে রোহিঙ্গারা শিশু অপহরণ করছে। এটা নিয়ে অভিভাবকরাও আতঙ্কিত। এই আতঙ্কের মধ্যে এলাকায় কোনো অপরিচিতি লোককে এলোমেলো চলাফেরা করতে দেখলেই গণধোলাই দেয়া হচ্ছে।
গত বুধবার রাতে সোনাডাঙ্গা থানাধীন ডেল্টা ভবনের সামনে থেকে একজন, নিউমার্কেটের সামনে থেকে একজন ও সোনাডাঙ্গা মোল্লা বাড়ির মোড় থেকে রোহিঙ্গা ছেলেধরা সন্দেহে একজনকে ধরেছে এলাকাবাসী। পরে এদেরকে সোনাডাঙ্গা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর রেলস্টেশন এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরির চেষ্টাকালে এক রোহিঙ্গাকে ধরে জিআরপি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া একই দিন খালিশপুর নয়বাটি মোড়ে রোহিঙ্গা সন্দেহে একজনকে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র খুলনা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম এ রহিম জানান, ‘বৃহস্পতিবার সকালে রেল স্টেশনে আমার মোটরসাইকেল রেখে একজনকে আনতে গেছিলাম। হঠাৎ দেখি মোটরসাইকেলের উপর একজন হেলমেট পড়ে মোটরসাইকেল স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করছিল। হেলমেট খুলে ওর চেহারা দেখে সন্দেহ হলে নাম জিজ্ঞাসা করি। কিন্তু ওর মুখের ভাষা বুঝতে না পেরে ধারণা হয় সে রোহিঙ্গা। পরে তাকে জিআরপি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রোহিত কুমার বিশ্বাস জানান, ‘বুধবার রাতে রোহিঙ্গা সন্দেহে দু’জনকে ধরে থানায় সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। এদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হলে তারা কিছু বলেনি। পরে আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এদের ছবি পাঠিয়েছে। শুক্রবার দুপুরে এদের পরিচয় পাওয়া যাবে। রোহিঙ্গা সনাক্ত হলে তাদেরকে ক্যাম্পে পাঠানো হবে। তবে এরা ছেলেধরা নয় বলে তিনি দাবি করেন।’
এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (আরসিডি) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, ‘রোহিঙ্গা সন্দেহে যাদেরকে ধরা হয়েছে; তাদের পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা চলছে। পরিচয় সনাক্ত না করে কাউকে রোহিঙ্গা বলা ঠিক হবে না। আর নগরীতে ছেলেধরা’র বিষয়ে কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে তিনি দাবি করেন।’