খুলনাজুড়ে করোনা আতঙ্ক, দাম বেড়েছে মাস্কের, প্রস্তুত ‘আইসোলেশন ইউনিট’
জয়নাল ফরাজী
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি এক নেপালি ছাত্র করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন সংবাদে দিনভর ছড়িয়েছে আতঙ্ক। তবে উক্ত ছাত্র করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়ায় গতকাল সোমবার সকালে হাসপাতালে ভর্তির পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দুপুর দেড়টার দিকে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে খুমেক হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, নেপালি নাগরিক ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এক ছাত্র সর্দি ও জ্বর নিয়ে সকালে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই ছাত্র করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয়। নেপালে এখনো কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তারপরও তাকে নিজ কক্ষে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে খুলনায় করোনাভাইরাস আতঙ্কে চাহিদা বেড়েছে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের। রবিবার রাত থেকেই নগরীর ফার্মেসীগুলোতে দেখা গেছে উপচেপড়া ভীড়। এতে করে মাস্ক সংকট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত চাহিদা থাকায় অধিক মূল্যে পণ্যগুলো বিক্রি করছে বিক্রেতারা। ফলে ৫ টাকার মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। নরমাল কাপড়ের মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৮০ টাকায়।
অপরদিকে করোনাভাইরাস সনাক্ত ও আক্রান্তদের চিকিৎসায় খুলনা বিভাগের সরকারি হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ‘আইসোলেশন ইউনিট’ চালু করা হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলার ১১টি সরকারি হাসপাতালে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৫৫টি শয্যা। প্রতিটি হাসপাতালের বিশেষ করোনা ইউনিটে দ্রুত করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন খুলনার সিভিল সার্জন।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। এসময় তারা চিকিৎসকদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং বিভিন্ন রোগী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো। সেজন্য জনসাধারণকে দীর্ঘস্থায়ী সর্দি-কাশি-জ্বর হলেই বিলম্ব না করে চিকিৎসকের কাছে আসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস মুক্ত হলেও এ সময় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। দুটি রোগেরই বাহন একই ধরনের। তাই কাঁচা রস, অতিথি পাখি ও পাখি খাওয়া ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আপাতত বিদেশভ্রমণ বন্ধ এবং বিদেশ থেকে আসা বিশেষ করে চীনা নাগরিকদের সংস্পর্শে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সচেতনতার বার্তা পৌঁছাতে বলা হয়েছে।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহম্মেদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে পাঁচ শয্যার ‘আইসোলেশন ইউনিট’ খোলা হয়েছে। প্রত্যেক ইউনিটে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে এই ইউনিটের প্রধান করে পৃথক টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়াও সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সহকারী পরিচালক চিকিৎসক ফেরদৌসী আক্তার বলেন, খুলনা বিভাগের সব হাসপাতালে বিশেষ ইউনিট চালুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। করোনা ইউনিটের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক কামাল হোসেনকে প্রধান করে পাঁচ শয্যার ‘আইসোলেশন ইউনিট’ খোলা হয়েছে। তবে খুলনায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো রোগী সনাক্ত হয়নি।