খালেদা বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে যাচ্ছেন না: কারা কর্তৃপক্ষ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তিনি যেতে রাজি হননি বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম রোববার বেলা পৌনে ১২টায় বলেন, “উনি ‘না’ করে দিয়েছেন, উনি যাবেন না।”
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের দণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্র“য়ারি থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত এই কারাগারে বন্দি রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেখানে তিনিই একমাত্র বন্দি।
মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে গত বছরের ৭ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। সে সময় প্রায় এক মাস চিকিৎসা শেষে আবার তাকে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
৭৪ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিসসহ বয়সজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। বিভিন্ন মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির করার সময় তাকে হুইল চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। গতবছর হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেওয়ার সময়ও তাকে হুইল চেয়ারে দেখা গিয়েছিল।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, কারাগারে তাদের নেত্রীর সুচিকিৎসা হচ্ছে না। সেখানে তার স্বাস্থ্যের ‘চরম অবনতি’ হয়েছে। এজন্য তাকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তরের দাবি নিয়ে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, মেডিকেল বোর্ড গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কারাগারে গিয়ে খালেদাকে দেখে এসে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা বলেছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে ‘শিগগিরই’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হবে।
তার পাঁচ দিনের মাথায় রোববার সকালে খালেদাকে স্থানান্তরের জন্য কারাগারে এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে প্রস্তুতি শুরু হয়। সকাল থেকেই কারা ফটকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি প্রস্তুত রাখতে দেখা যায়।অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের কেবিন ব্লকের ৬২১ ও ৬২২ নম্বর কেবিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে গোছানোর কাজ শুরু হয়। ওই ভবনের সামনে অবস্থান নেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
বিএনপিনেত্রীর চিকিৎসায় আদালতের নির্দেশে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের দুই সদস্যকে নিয়ে সকাল পৌনে ১০টার দিকে ছয় তলায় ওই কেবিন ঘুরে যান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন।
খালেদা জিয়াকে কখন কারাগার থেকে আনা হবে জানতে চাইলে সে সময় তিনি বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি আছে, তবে আমাকে সময়টা এখনও জানানো হয়নি।”
এর মিনিট পনের পর কারাগারের সামনে লালবাগ বিভাগের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “উনাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি করার প্রস্তুতি চলছে। তবে এখনও উনি ঘুম থেকে ওঠেননি। উনি অনিহা প্রকাশ করলে হাসপাতালে নেওয়ার প্রোগ্রাম বাতিলও হতে পারে।”
খালেদাকে হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রস্তুতির খবরে কারাগারের বাইরে ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের সামনে ভিড় করেন সংবাদকর্মীরা। বিএনপি নেতাকর্মীদেরও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল উপস্থিত হতে দেখা যায়।
এক পর্যায়ে শোনা যায়, খালেদা জিয়াকে বেলা ১১টার দিকে আনা হতে পারে। পরে বলা হয়, তাকে আনা হতে পারে বেলা ১২টার দিকে।
কিন্তু বেলা পৌনে ১২টায় জেলার মাহবুবুল ইসলাম জানিয়ে দেন, খালেদা জিয়া হাসপাতালে যেতে রাজি হননি।
গত ৫ মার্চ আদালতে এক মামলার শুনানিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “উনি (খালেদা জিয়া) প্রথমবারের মতো বলেছেন যে, ‘আমি অসুস্থ, অসুখে আমি কষ্ট পাচ্ছি’।”
বিএনপি চেয়ারপারসন তাহলে কেন হাসপাতালে যেতে চাচ্ছেন না জানতে চাইলে জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, “উনি অপারগত প্রকাশ করেছেন। এক্ষেত্রে আমাদের তো করার কিছু নেই।”
তবে কারাগারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, “বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিএনপি চেয়ারপারসনের পছন্দ নয়। উনি চান, উনাকে বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে নেওয়া হোক।”