September 20, 2024
জাতীয়

খাদ্যে ভেজালকারীদের চরম দণ্ড দিন : নাসিম

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে যারা মৃত্যু ঘটনায়, তাদের বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার আহŸান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নিরাপদ খাদ্য ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এই আহŸান জানান তিনি।

রোজায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বিভিন্ন নামি খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানকেও মানহীন পণ্যের জন্য জরিমানা গুণতে হচ্ছে। খাবারে ভেজালের বিরুদ্ধে সরকারকে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করে পদক্ষেপ নিতে এরই মধ্যে আদালতের পক্ষ থেকে আহŸান জানানো হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি নাসিম খাদ্যে ভেজালকারীর বিরুদ্ধে ১৯৭৪ এর বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান কার্যকরের আহŸান জানান। তিনি বলেন, এই ব্যাপারে আমি আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, আপনারা একজন/দুইজন ভেজালকারীকে ধরে ওই দণ্ডের অধীনে বিচারের ব্যবস্থা করেন।

বিচারকদেরও কঠোর হওয়ার আহŸান জানিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, একবার যদি ভেজালকারীর বিরুদ্ধে মামলা পান, তাহলে তার বিরুদ্ধে চরম দণ্ড প্রদান করুন, যদি প্রমাণ হয় তার কারণে মানুষ মারা গেছে। ভেজালকারীর বিরুদ্ধে একবার মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দেখান যে আদালত একটি কাজ করেছে। এরা খুনি, এদেরকে যদি ফাঁসি দেন, তাহলে বাংলাদেশে ভেজাল কমে যাবে।

খাবারে ভেজাল যারা মেশায়, তাদের পক্ষে না দাঁড়াতে আইনজীবীদের প্রতিও আহŸান জানান সংসদ সদস্য নাসিম। তিনি বলেন, ভেজাল ওষুধ তৈরি করে, এমন একটি ওষুধ কোম্পানি বন্ধ করে দিয়েছিলাম, কিন্তু এই কোম্পানির পক্ষে বড় বড় ব্যারিস্টার, আইনজীবীরা বিরাট পয়সা নিয়ে আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে ফ্যাক্টরি চালু রেখেছে। আমি বন্ধ রাখতে পারিনি। ওই বিরাট আইনজীবীর সামনে দাঁড়িয়ে আমার মন্ত্রণালয়ের আইনজীবী কথাই বলতে পারেনি, ভয় পায়। ব্যবসায়ীদেরকেও ভেজালবিরোধী অবস্থান নেওয়ার আহŸান জানান তিনি।

আমি আপনাদের অনুরোধ করব, আপনারা কেন এসব আগধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন না? আপনাদের ব্যবসায়ী সমিতি আছে, এফবিসিসিআই আছে। আপনারা কেন বলেন না যে, এই ভেজাল মেশানো ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য হতে পারবে না, হলেও তাকে কেন বাদ দিবেন না? আপনারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।

নাসিম বলেন, একজন ভেজালকারী সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী। এরা সবচেয়ে বড় জঙ্গি, সবচেয়ে বড় ঘাতক। এরা একাত্তরের ঘাতকের সমান। বিএনপিকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে ভেজালকারী, নারী নির্যাতনকারী, মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগ নেতা নাসিম।

কৃষকদের স্বার্থে চাল আমদানি পুরোপুরি বন্ধের পক্ষে আছেন বলে জানান খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। আমি সংসদেও বলেছি। প্রয়োজনে আরও বেশি ধান কেনেন। ধান কিনে কৃষককে সাহায্য করেন। চাল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, খাদ্য ভেজালকারীরা যেন রাজনৈতিক প্রশ্রয় না পায়, প্রশাসন তাদের যেন কোনো ছাড় না দেয়, সেই দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, খাদ্যে ভেজালের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গরিব মানুষেরা। সস্তা খাবারে বেশি ভেজাল হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ভেজালমুক্ত খাবার কোনটা, সেটা বলা কঠিন। এ নিয়ে গবেষণা হতে পারে। আমাদের ক্যান্সার, লিভার হাসপাতালে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। খাদ্যে ভেজাল না থাকলে মানুষের গড় আয়ূ আরও ১৫ বছর বৃদ্ধি পেত, ৫০ শতাংশ ক্যান্সার রোগী কমে আসতো।

ভেজাল ও মাদকবিরোধী আন্দোলন নামে একটি সংগঠনের আয়োজনে এই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, কৃষিবিজ্ঞানী মো. আলী আফজালসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন। সংগঠনের সভাপতি মুহাম্মদ আতা উল­াহ খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. গনি মিয়া বাবুল।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *