ক্রিসেন্টের কাদেরের জামিন শুনানিতে তদন্তের ‘গোপন নথি’
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
প্রায় হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের মামলায় গ্রেপ্তার ক্রিসেন্ট গ্র“পের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরের জামিন শুনানিতে তদন্ত কর্মকর্তার নেওয়া সাক্ষীদের জবানবন্দি উপস্থাপন করা হয়েছে, যা আইনের পরিপন্থি বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। ঢাকার মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তার সোমবার এই মামলার শুনানি নিয়ে কাদেরের জামিন আবেদন নাকচ করেন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এই মামলার শুনানি শুরু হলে কাদেরের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী মামলার তদনন্তকালে তদন্ত কর্মকর্তার নেওয়া সাক্ষীদের জবানবন্দি উপস্থাপন করে জামিন শুনানি করতে চান। তখন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর তার বিরোধিতা করে বলেন, “মামলাগুলোতে এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তার নেওয়া সাক্ষীদের ১৬১ ধারার জবানবন্দি আসামিপক্ষ দেখতেও পারেন না। কপিও নিতে পারেন না। আর সেগুলো আদালতে উপস্থাপনও চাইতে পারেন না জামিন শুনানির জন্য। “তাহলে তদন্তের বিষয় আসামিপক্ষের কাছে ডিসক্লোজড হয়ে যায়। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আগে এ কাগজপত্রগুলো আদালতে উপস্থাপন করার দাবি আইনসঙ্গত নয়।” মামলাটি তদন্ত করছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এ মামলায় এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি বলে আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখা জানিয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট ‘গোপন নথি’ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের বিরোধিতা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। তবে তার বক্তব্য শেষ করার আগেই বিচারক জামিন নাকচের আদেশ দিয়ে দেন। এ সময় এহসানুল হক সমাজী বিচারকের উদ্দেশে বলেন, “আপনি আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ না শুনেই শুধুমাত্র প্রসিকিউশন পক্ষের শুনানি নিয়ে একতরফাভাবে তাড়াড়াড়ি আদেশ দিলেন, এটি ন্যায়বিচার নয়। একজন বিচারকের কাছ থেকে রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষেরই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে।”
৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ তদন্তের জন্য ক্রিসেন্ট গ্র“পের চেয়ারম্যান কাদেরকে গত ৩০ জানুয়ারি কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সদরদপ্তরে ডাকা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তাকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়। পরে ক্রিসেন্ট গ্র“পের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস, ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ এবং রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের নামে ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করে ৫৬ এম এ কাদের ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের চেয়ারম্যান। আর তার ভাই চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্তধার আব্দুল আজিজ রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান। মামলায় বলা হয়, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ৪২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, রিমেক্স ফুটওয়্যার ৪৮১ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা অর্থাৎ মোট ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছে। ওই সব প্রতিষ্ঠানের নামে রপ্তানি বিল দেখিয়ে এই টাকাগুলো জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। পরে এই টাকা আর ফেরত পায়নি ব্যাংক। মামলায় জনতা ব্যাংকের ১৩ জন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়, যাদের অধিকাংশই চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন।