ক্যাসিনোর টাকার ভাগ কে কে পেত, সে খোঁজও চলছে : ওবায়দুল
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বিভিন্ন ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে পরোক্ষভাবে যারা জড়িত ছিলেন, তাদেরও খুঁজে বের করার কথা বলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ক্যাসিনো বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মধ্যে গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
কাদের বলেন, শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দিবেন না। শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। খুঁজে খুঁজে অপকর্মকারীদের, সন্ত্রাসীদের, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজদের বের করবেন। অন্যায়ভাবে অর্জিত অর্থ কোন কোন নেতার কাছে যেত, তা বের করা হচ্ছে।
এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক বিএনপি নেতার কাছেও এই ক্যাসিনোর টাকা গেছে, এই খবর গণমাধ্যমে বেরিয়ে আসছে। এই প্রশ্নেরও জবাব বিএনপিকে দিতে হবে। জুয়ার আখড়া বন্ধে অভিযানকে দুর্নীতি নির্মূলে সরকারের পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, যা অতীতের শাসকরা করতে পারেনি, খালেদা জিয়া পারেনি, আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনা করতে পেরেছেন।
দুর্নীতি নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে কাদের বলেন, আপনাদের আমলে বিএনপির কোনো স্তরের নেতাকর্মীদের কোন অপরাধের জন্য শাস্তি পেতে হয়নি। তারা শুরু করেছিল হাওয়া ভবন সংস্কৃতি। এই হাওয়া ভবন ছিল দুর্নীতির আখড়া, হাওয়া ভবন খাওয়া ভবনে পরিণত হয়েছিল। এই বিএনপি নেতাদের মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা ভুতের মুখে রাম নাম ছাড়া আর কিছুই না।
কদের বলেন, তবে আওয়ামী লীগ ধোয়া তুলসী পাতা না, এখানে কেউ অপকর্ম, চাঁদাবাজি, গডফাদারি করে না, এটা বলছি না। তবে আমরা ইমপিওনিটি কালচার চালু করেছি, যা বিএনপি করেনি।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের অনেক নেতা-কর্মী আজকে জেলে। অনেক নেতা, এমপি, মন্ত্রী দুদকের মামলায় হাজিরা দিচ্ছে। আমাদের দলের নেতারা দুদকের মামলায় জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাওয়ার পর তিনি বলে দিয়েছেন- ‘আমি দুদকের ওকালতি করি না’।
ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনার আহŸান জানিয়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগের দায়িত্ব পরিবর্তন হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আমি এখানে দেখতে পাচ্ছি।
তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, রাজনীতিকে বঙ্গবন্ধুর চিরবিজয়ী আদর্শে ফিরিয়ে আনতে হবে। শেখ হাসিনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হলে তোমাদেরকে খারাপ খবরের শিরোনাম হওয়া যাবে না। ছাত্রলীগ ভালো খবরের শিরোনাম হবে, এটাই আমরা আশা করি।
শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ উপ-কমিটির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৭৩ জন শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়ার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ওবায়দুল কাদের।
অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ভিন্ন আদর্শের ভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও বঙ্গবন্ধুকন্যার সুসম্পর্ক ছিল। আমরা বেবী মওদুদের কথা অনেকেই জানি, শেখ হাসিনা ও বেবী একসঙ্গে পড়ত, কিন্তু পৃথক ছাত্র সংগঠনে ছিলেন। তাদের মধ্যে সেই সময়ে যে সৌহার্দ্য ছিল, সেটা বেবীর মৃত্যু পর্যন্ত টিকে ছিল। এটা এখনকার ছাত্রনেতাদের জন্য উদহরণ হতে পারে।
শেখ হাসিনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন, তা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তার শিক্ষক জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন আগরতলা ষড়যন্ত মামলায় ক্যান্টনমেন্টে বন্দি, তখন শেখ হাসিনা বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। তখন স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি আমাদের অত্যন্ত সহানুভূতি ছিল। তখনকার বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী।
শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে দাঁড়িয়েছিলেন। আগরতলা মামলায় তার বাবা জেলে থাকায় অন্য কোনো বিভাগ ভর্তি নিচ্ছিল না। তখন মুনির চৌধুরী সাহেব আমাকে বললেন, শেখ মুজিবরের কন্যা শেখ হাসিনাকে আমাদের এখানে নিয়ে আসো। ও ভর্তি হতে এসেছে, আমরা বাংলা বিভাগ তাকে ভর্তি করব।
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ উপ কমিটির চেয়ারম্যান এ এফ ফখরুল ইসলাম মুন্সীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আকতারুজ্জামান, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক সামসুন্নাহার চাঁপা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন।