ক্যাসিনোকাণ্ড : এনু-রুপনের বাড়ি থেকে পাঁচ সিন্দুকে ২৬ কোটি টাকা উদ্ধার
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ক্যাসিনোকাÐে গ্রেপ্তার গেÐারিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার আরেক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি সিন্দুকে থরে থরে সাজানো ২৬ কোটি টাকা পেয়েছে র্যাব। সেই সঙ্গে পাওয়া গেছে মোটা অংকের এফডিআর, সোনার গয়না, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা এবং ক্যাসিনোর সরঞ্জাম, যেগুলো ঢাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকে এসেছে বলে র্যাব কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
পুরান ঢাকার লালমোহন সাহা স্ট্রিটের ১১৯/১ হোল্ডিংয়ে মমতাজ ভিলা নামের ওই ছয়তলা বাড়ির নিচতলায় সোমবার মধ্যরাত থেকে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলমের নেতৃত্বে এ অভিযান চলে।পরে মেশিন এনে টাকা গোণা শেষ করতে বেলা ১টা বেজে যায়।
পরে ঘটনাস্থলে এক ব্রিফিংয়ে র্যাব-৩ অধিনায়ক রাকিবুল হাসান বলেন, নিচতলার ওই বাসায় পাঁচটি সিন্দুকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা এবং ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সোনার গয়না পাওয়া গেছে প্রায় এক কেজি।
সময় টিভি থেকে নেওয়া ছবিসময় টিভি থেকে নেওয়া ছবিযেসব বিদেশি মুদ্রা পাওয়া গেছে তার মধ্যে আছে ৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার, ১৫৪ মালয়েশীয় রিঙ্গিত, ৫ হাজার ৩৫০ ভারতীয় রুপি, ১ হাজার ১৯৫ চায়নিজ ইয়েন, ১১ হাজার ৫৬০ থাই বাথ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ১০০ দিরহাম রয়েছ।
এই অর্থ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র এখন আমরা থানায় হস্তান্তর করব। পরে সেখান থেকে নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয়ে যাবে।
র্যাব-৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম ফয়জুল ইসলাম বলেন, সংকীর্ণ গলির ভেতরে ওই বাসার অভিযানের সময় কেউ ছিলেন না। বাসাটি আকারে ছোট হলেও সবকিছু বেশ সুরক্ষিত অবস্থায় ছিল। এনু-রুপনের দুই ডজন বাড়ির বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা এ বাসার সন্ধান পাই। তবে এখান থেকে নতুন কাউকে আটক করা যায়নি। ওই বাড়িতে পাওয়া ক্যাসিনোর সরঞ্জামে পাওয়া গেছে, যেগুলোতে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সিল লাগানো ছিল বলে ফয়জুল ইসলাম জানান।
এদিকে মমতাজ ভিলায় অভিযানের মধ্যেই ওই এলাকায় এনু ও রুপনের আরো একটি বাড়ির সন্ধান পাওয়ার খবর আসে। লালমোহন সাহা স্ট্রিটের ১০৬ নম্বর হোল্ডিংয়ে দশ তলা ওই ভবনের নামও মমতাজ ভিলা। ওই বাড়িতেও অভিযান চালানো হবে বলে র্যাব সদরদপ্তরের সহকারী কমিশনার সুজয় সরকার সে সময় জানান।
সময় টিভি থেকে নেওয়া ছবিসময় টিভি থেকে নেওয়া ছবিতবে পরে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে র্যাব-৩ অধিনায়ক রাকিবুল হাসান বলেন, অন্য বাসার বিষয়টি আমরা কনফার্ম করতে পারিনি, তাই সেখানে আপাতত অভিযান হচ্ছে না।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এনু আর রুপনই মমতাজ ভিলার মালিক। তবে এত টাকার উৎস কী, কেন এখানে এনে রাখা হয়েছিল, সেসব বিষয় তদন্ত করে বের করতে হবে। ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের পরিচালক এনু ছিলেন গেÐারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। আর তার ভাই রুপন ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে ওয়ান্ডারার্সে অভিযান চালিয়ে জুয়ার সরঞ্জাম, কয়েক লাখ টাকা ও মদ উদ্ধার করে র্যাব।
সময় টিভি থেকে নেওয়া ছবিসময় টিভি থেকে নেওয়া ছবিএর ধারাবাহিকতায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর গেÐারিয়ায় প্রথমে এনু ও রুপনের বাড়িতে এবং পরে তাদের এক কর্মচারী এবং তাদের এক বন্ধুর বাসায় অভিযান চালিয়ে পাঁচটি সিন্দুকভর্তি প্রায় ৫ কোটি টাকা, আট কেজি সোনা এবং ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, সিন্দুকে পাওয়া ওই টাকার উৎস ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো। টাকা রাখতে জায়গা বেশি লাগে বলে কিছু অংশ দিয়ে সোনা কিনে রাখতেন এনামুল। ওই ঘটনার পর মোট সাতটি মামলার করা হয়, যার মধ্যে অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়া পরিচালনা ও অর্থ-পাচারের অভিযোগে চারটি মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। বেশ কিছুদিন পলাতক থাকার পর চরতি বছরের ১৩ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যায় একটি ভবন থেকে এক সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হন এনু-রুপন দুই ভাই।
সিআইডির পক্ষ থেকে সেদিন বলা হয়,সেপ্টেম্বরে র্যাবের ওই অভিযানের পর এনু ও রুপন কক্সবাজারে চলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে নৌপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু ওই পথে যেতে না পেরে কেরানীগঞ্জে এসে আশ্রয় নেন এবং ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করান। ওই পাসপোর্ট দিয়ে ভারত হয়ে নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়াগ্রেপ্তার হওয়ার পর এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়াসিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ সে সময় বলেছিলেন, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো কারবারের হোতা ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এ দুই ভাই। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দুই ভাইয়ের নামে ২২টি বাড়ি ও জমি এবং পাঁচটি যানবাহনের সন্ধান পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, প্রথমে ওই ক্লাবে তারা ‘ওয়ান টেন’ নামে একটি জুয়া খেলা চালু করে, পরে নেপালিদের মাধ্যমে সরঞ্জাম এনে সেখানে পুরোদস্তর ক্যাসিনো চালু করে। দুই ভাইয়ের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৯১টি ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে প্রায় ১৯ কোটি ১১ লাখ টাকার তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে ইমতিয়াজ সেদিন বলেন, এসব ব্যাংক হিসাব এখন অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।