ক্যাপিটলে দাঙ্গায় নিহত নারী মার্কিন বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে কংগ্রেসের অধিবেশন চলার সময় প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলায় সৃষ্ট দাঙ্গায় পুলিশের গুলিতে নিহত নারী দেশটির বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা।
তার প্রাক্তন স্বামীর বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, নিহত অ্যাশলি বাবিট (৩৫) বিমান বাহিনীর হয়ে দুইবার আফগানিস্তান ও ইরাকে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখান থেকে ফেরার পর তিনি কুয়েত ও কাতারে ‘ন্যাশনাল গার্ড’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়ায় গত বুধবার মার্কিন কংগ্রেসে যৌথ অধিবেশন চলার সময় ট্রাম্প সমর্থকরা মিছিল করে ক্যাপিটল ভবনের সামনে জড় হয়। এক পর্যায়ে তারা নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে এবং ভবনের ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাংচুর চালায়।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগোর বাসিন্দা বাবিট সম্প্রতি বিয়ে করেন এবং তার স্বামী অ্যারন বাবিটের সঙ্গে একটি পুল সার্ভিস কোম্পানিতে চাকরি করতেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে একজন ‘উদারপন্থি’ এবং ‘দেশপ্রেমিক’ বলে বর্ণনা করা বাবিট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একজন পাঁড় সমর্থক এবং প্রায়ই ট্রাম্পের পক্ষে নিজের একাউন্টে নানা পোস্ট দিতেন।
মৃত্যুর আগের দিনও এক পোস্টে তিনি ট্রাম্প সমর্থকদের বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিতে ওয়াশিংটন ডিসিতে যাওয়ার কথা জানান।
তিনি লেখেন, ‘‘আমাদেরকে কেউ থামাতে পারবে না। তারা চেষ্টা করতে পারে, চেষ্টা করতে পারে এবং চেষ্টা করে যেতেই পারে। কিন্তু এখানে যে ঝড় উঠেছে, সেটি ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে মধ্যে ডিসি তে আঘাত হানতে যাচ্ছে।”
অ্যাশলি বাবিটের প্রাক্তন স্বামী তার সম্পর্কে বলেন, ‘‘তার ব্যক্তিত্ব এমনই ছিল যে, আপনি তাকে ভালোও বাসবেন আবার ঘৃণাও করবেন এবং এটা নিয়ে তার মধ্যে কোনো দুঃখবোধ ছিল না…বরং সে এটা নিয়ে গর্বিত ছিল। যেমন করে সে তার দেশ এবং একজন আমেরিকান হওয়া নিয়ে গর্ব করতো।”
বাবিট নিয়মিতই ট্রাম্পের নানা সমাবেশে যোগ দিতেন। গত সেপ্টেম্বরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা একটি ছবিতে তাকে সান ডিয়াগোতে ট্রাম্পের ‘বোট প্যারেড’ এ যোগ দিতে দেখা যায়।
গত বুধবার ক্যাপিটল ভবনে সহিংসতার সময় পুলিশের বাধা ডিঙ্গিয়ে ভবনের ভেতরে ঢুকে যান বাবিট। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি দরজার পাশের একটি তাক বেয়ে উপরে উঠছেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গুলির শব্দ শোনা যায় এবং তাকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখা যায়।
পরে ক্যাপিটল পুলিশের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘বিক্ষোভকারীরা জোর করে হাউজ চেম্বারে ঢুকে পড়ার সময় ইউনাইটেড স্টেটস ক্যাপিটল পুলিশের একজন কর্মী তার সার্ভিস আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালান। কারণ ওই সময় কংগ্রেস সদস্যরা হাউজ চেম্বারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পুলিশের গুলি একজন নারীকে আঘাত হানে।’’
গুলিবিদ্ধ বাবিটকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বুধবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। পুলিশ জানায়, যে কর্মকর্তা গুলি করেছিলেন তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তবে তার পরিচয় জানানো হয়নি।
বুধবারের ওই দাঙ্গায় আরো তিনজন নিহত হন। ট্রাম্পের ডাকে সাড়া দিয়ে বিক্ষোভে যোগ দিতে তারা ওয়াশিংটন ডিসিতে গিয়েছিলেন। নিহতরা হলেন: পেনসিলভেইনিয়ার বেঞ্জামিন ফিলিপস (৫০), আলাবামার কেভিন গ্রিসন (৫৫) এবং জর্জিয়ার রোজানি বয়ল্যান্ড (৩৪)।
এছাড়া, বিক্ষোভকারী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় আহত এক পুলিশ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ নিয়ে ওই সহিংসতায় পাঁচ জনের মৃত্যু হলো। দাঙ্গায় আরো অন্তত ১৪ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।