কোভিড-১৯: ফ্রান্স, স্পেন, ইতালিতে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা কমছে
কোভিড-১৯ এ কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম দৈনিক মৃত্যুর তথ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে বিধিনিষেধ শিথিলের প্রস্তুতি নিতে থাকা ইউরোপের ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেনে
ফ্রান্স ১৩৫ মৃত্যুর কথা জানিয়েছে, স্পেন ১৬৪- যা মধ্য-মার্চের পর থেকে দেশ দুটিতে একদিনে সবচেয়ে কম মৃত্যু আর ইতালি একদিনে ১৭৪ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে যা দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম; জানিয়েছে বিবিসি।
এদিকে ফ্রান্সের চিকিৎসকরা দাবি করেছেন, রোগীদের থেকে নেয়া নমুনা নিয়ে করা নতুন পরীক্ষায় দেখা গেছে ভাইরাসটি গত বছরও ফ্রান্সে উপস্থিত ছিল। এটি ঘটেছে দেশটিতে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের আগেই।
রাশিয়ায় ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। রোববার দেশটিতে ১০ হাজারেও বেশি নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে।
কিন্তু অন্য দেশগুলোর তুলনায় রাশিয়ার মৃত্যুর হার এখনও কম। এদিন দেশটিতে ৫৮ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে, এতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৮০ জনে।
এদিন যুক্তরাজ্যে নতুন করে ৩১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালির পর বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যায় দেশটি এখন তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তবে সেখানে প্রাদুর্ভাব সর্বোচ্চ চূঁড়া পার করেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এবং হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে এই মহামারীতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে এবং মৃতের সংখ্যা আড়াই লাখের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে।
ভাইরাসটি গত বছর ফ্রান্সে ছিল?
মধ্য-মার্চের পর থেকে রেকর্ড করা নতুন মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে কম হয়েছে ফ্রান্সে। প্রথমদিকে শুধু হাসপাতালগুলোতে মারা যাওয়া রোগীদের রেকর্ড রাখা হলেও পরে কেয়ার হোমগুলোতে মারা যাওয়া রোগীদের রেকর্ড রাখাও শুরু হয়। কয়েকদিন ধরে সব মিলিয়েই দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।
এদিকে প্যারিস অঞ্চলের একজন নিবিড় পরিচর্যা বিষয়ক প্রধান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ফ্রান্সে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার এক মাস আগে ২৭ ডিসেম্বরেই ভাইরাসটি সে দেশে ছিল।
বিএফএমটিভিকে ইভ কোহেন জানান, ডিসেম্বরে ও জানুয়ারিতে শ্বাসকষ্টের লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২৪ জন রোগীর নমুনা ফের পরীক্ষা করেছেন তারা।
“ওই ২৪ রোগীর মধ্যে আমরা একজনকে ২৭ ডিসেম্বরেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত ছিল বলে শনাক্ত করেছি, ওই সময় তিনি আমাদের সঙ্গেই হাসপাতালে ছিলেন,” বলেছেন তিনি। ফলাফল নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষাটি কয়েকবার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এই বিষয়টি আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং ওই সময়ে যেসব পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছিল সেগুলোর পুনঃপরীক্ষার আর্জি জানিয়েছেন বলে ডাঃ কোহেন জানান।
১১ মে-তে লকডাউন তুলে নেয়ার পরিকল্পনা করছে ফ্রান্স। এ দিন থেকে শিশুরা পর্যায়ক্রমে স্কুলে ফিরতে শুরু করবে, কিছু ব্যবসা ফের চালু হবে এবং কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই লোকজন তাদের বাড়ি থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবেন।
রোবাবর দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভিয়ের ভেরন জানিয়েছেন, এসব সিদ্ধান্ত নতুন আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে, বিশেষ করে প্যারিস অঞ্চল ও উত্তরপূর্ব ফ্রান্সের মতো সবচেয়ে আক্রান্ত এলাকাগুলোর পরিস্থিতির ওপর।
ফ্রান্স এটাও পরিষ্কার করেছে যে, ইইউভুক্ত দেশগুলো, শেনগেন অঞ্চল ও যুক্তরাজ্য থেকে থেকে ফ্রান্সে আসা কাউকে আর দুই সপ্তাহ আইসোলেশনে থাকতে হবে না।
স্পেনে কী হচ্ছে?
স্পেনে রোববার দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ১৬৪ জন ছিল, যা দেড় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং আগেরদিন শনিবারের সংখ্যা থেকে শতাধিক কম।
সাত সপ্তাহ পর শনিবার থেকে দেশটিতে প্রাপ্তবয়স্কদের বাইরে যেয়ে ব্যায়াম করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ১৪ বছরের নিচের শিশুদের জন্য লকডাউন শিথিল করা হয়।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী সানচেজ বলেছেন, তার দেশ এখন লকডাউনের সময়কার ত্যাগের পুরষ্কার পাচ্ছে। ইউরোপের কঠোরতম লকডাউনের মধ্যে স্পেনেরটি অন্যতম ছিল।
সোমবার থেকে দেশটিতে গণপরিবহনে মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেলুনের মতো কিছু ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সীমিত পরিসরে ব্যবসা চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ইতালির অবস্থা কী?
দুই মাস আগে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে রোববার করোনাভাইরাসজনিত দৈনিক মৃত্যুর সর্বনিম্ন সংখ্যা লিপিবদ্ধ করেছে ইতালি। দেশটিতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রোগীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়া অব্যাহত আছে।
সোমবার থেকে দেশটিতে লকডাউন শিথিল হচ্ছে। এ দিন থেকে ইতালিয়ানরা সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে বাইরে যেয়ে ব্যায়াম করতে পারবেন। তারা নিজ অঞ্চলের মধ্যে থাকা আত্মীয়দেরও দেখতে যেতে পারবেন, কিন্তু বন্ধুদের নয়।
তবে স্কুল, সিনেমা ও অধিকাংশ দোকান বন্ধই থাকবে। জুন থেকে ক্রেতারা বার ও রেস্তোরাঁগুলোর টেবিলে বসতে পারবেন।
২৮ হাজার ৮৮৪ জন মৃত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় স্থানে আছে ইতালি। যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে।
যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা ২৮ হাজার ৪৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে আর স্পেনে ২৫ হাজার ১০০ জন ও ফ্রান্সে ২৪ হাজার ৭২৯ জন।
আগামী রোববার যুক্তরাজ্য সরকার মহামারীর বিষয়ে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা ঘোষণা করতে পারে।