কোটি টাকার মিশনে কলারোয়ায় বিভিন্ন গাইড বই কোম্পানি
কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নতুন বছরের নতুন শ্রেণিতে ওঠা আর নতুন বইয়ের উৎসব সবকিছু ম্লান করে দিচ্ছে কতিপয় গাইড বই কোম্পানী আর উপজেলার কিছু অসাধু শিক্ষক নামের ব্যবসায়িরা। নতুন বছরের শুরুতে নতুন বই সরবরাহ করার সঙ্গে সঙ্গে বলা হচ্ছে এই বই পড়ার জন্য সহায়ক হিসাবে এই গাইড অবশ্যই কিনতে হবে। গাইড বই না কিনলে তারা পড়া বুঝতে পারবে না এমনকি অকৃতকার্য হওয়ার ভয় পর্যন্ত দেখানো হচ্ছে। প্রতি বছরের শুরুতে শুরু হয় শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের মধ্যে গাইড বই আতঙ্ক।
আর এই গাইড সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, মাধ্যমিক শিক্ষা সমিতি, ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক, পুস্তুক ব্যবসায়ী সমিতি। ইতি মধ্যে কলারোয়া উপজেলার মেইন মেইন কিছু বিদ্যালয়ে সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ নোট-গাইড কোম্পানির সাথে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। উপজেলার ৪৮টি মাধ্যামিক পর্যায়ের বিদ্যালয় গুলোতে বিভিন্ন বই কোম্পানির প্রতিনিধিরা ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি নোট-গাইড ও ব্যাকরন সহ অন্যান্য বই শিশুদের কেনার জন্য চুক্তিতে শিক্ষক ও গাইড বই কোম্পানীর প্রতিনিধিদের মধ্যে সমঝোতা হচ্ছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে কলারোয়া বাজারের একজন বিশিষ্ট বই ব্যবসায়ি জানান- উপজেলার স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটর মাধ্যমে প্রতিবছর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির সাথে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এ সব নোট বই, গাইড ও কোম্পানির তৈরী করা সিলেবাস কিনতে চুক্তি বদ্ধ হয়। এবারও তাই হয়েছে।
অন্যদিকে কলারোয়া উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান-উপজেলার ৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনুপাতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সাথে ২০১৮ সালে পাঞ্জেরী গাইড, জননী প্রকাশনী, হাসান বুক হাউজ, জুপিটার ও পপি কোম্পানির জেলা ম্যানেজারদের সাথে এ সব স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলার বইয়ের দোকানীকে ম্যানেজ করে মোটা অংকের চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিন্ম মানের এ নোট বই ও গাইড শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করবে। তারা আরো জানান, প্রতি বছর প্রকাশ্যে টাকার বিনিময়ে এ ধরণের শিক্ষা বানিজ্য হলে ও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন না এবং সাংবাদিকরা কোন ও খবর প্রকাশ করেনা বলে তারা আক্ষেপ করেন। এবারও তাই শুরু হতে যাচ্ছে। এ গুলো এখুিন বন্ধ করার প্রয়োজন।
স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অভিযোগ করে জানান-২০১৮ সালে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকরা নিন্ম মানের গাইড, নোট বই ও সিলেবাস কোম্পানীর সাথে কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় চড়া মূল্যে শিক্ষার্থীদের এসব নিষিদ্ধ ব্যাকারণ, গ্রামারসহ বিভিন্ন গাইড বই কিনতে বাধ্য করছেন। এবারও তারা নতুন বছরের শুরুতেই একই ভাবে তাদের প্রতারনার জাল ফেলতে শুরু করেছে। এদিকে স্থানীয় সরকারের সু-দৃষ্টি দেওয়া ও মোবাইল কোর্টের মাধ্য দোকান গুলোতে জরিমানা করার দাবী জানিয়েছেন কলারোয়া উপজেলার সচেতন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণ।
এই বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আঃ হামিদ জানান, এবার উপজেলায় সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ নোট-গাইড বই বিক্রয় হলে সেখানে উপজেলা প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, কলারোয়াতে নিষিদ্ধ নোট-গাইড কোথায় বিক্রয় হচ্ছে তার জানা নেই। গাইড বই বিক্রয় হলে আমাদের জানান ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আমানুল্লাহ আমান জানান, এবার কলারোয়াতে কোন ধরনের গাইড বই বিক্রয় করতে দেয়া হবে না।