কোটালীপাড়া থেকে ৪৮ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোটালীপাড়ার জনসভা মাঠ থেকে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্যে ৪৩টি নবনির্মিত উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে নিজের নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গারহাট তালিমপুর-তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভার শুরুতে এসব উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে কোটালীপাড়ায় আসেন।
৪৮টি প্রকল্পের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ৩১টি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চারটি, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর তিনটি, কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ দুইটি, গোপালগঞ্জ পৌরসভা দুইটি, গণপূর্ত বিভাগ দুইটি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর দুইটি, কোটালীপাড়া পৌরসভা একটি, গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদ একটি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে: কুশলী জিসি-ধারবাশাইল জিসি ভায়া মিত্রডাঙ্গা, সোনাখালী সড়কে এক হাজার ৪৭০ মিটার চেইনেজে ৯৯ মিটার গার্ডার ব্রিজ। কুশলী জিসি ধারাবাশাইল জিসি ভায়া মিত্রডাঙ্গা সোনাখালী সড়কে ১৬ হাজার ৬০০ মিটার চেইনেজে ২০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। সিঙ্গিপাড়া আরএইচডি-মুন্সিরচর ভায়া শেখ কামাল সড়কে এক হাজার ২৭০ মিটার চেইনেজে ২০ মিটার আরসিসি স্লাব ব্রিজ। কুশলীহাট জিসিসি ধারবাশাইল জিসিসি ভায়া মিত্রডাঙ্গা সোনাখালী সড়কে সাত হাজার ৭৫০ মিটার চেইনেজে ৭৫ মিটার আরসিসি ব্রিজ। কুশলী ইউনিয়ন কৃষক সেবা কেন্দ্র। বাঁশবাড়িয়া জিসি ঝনঝনিয়া-ঘাঘর জিসি সড়ক (চেইনেজে০০-১২ হাজার ৬৩৫ মিটার)। বাঁশবাড়িয়া জিসি-বিশারকান্দি জিসি ভায়া করফা বাজার, তরু বাজার, কাচারিভিটা বাজার সড়ক প্রশস্ত ও শক্তিশালীকরণ (চেইনেজে ০০-নয় হাজার ২২৫ মিটার)।
কোটালীপাড়া উপজেলার বঙ্গলক্ষী বাজার হতে রামশীল ইউপি অফিস সড়কে ছয় হাজার ৮১৫ মিটার চেইনেজে ৯৯ দশমিক ৭০ মিটার আরসিসি ব্রিজ। উত্তরপাড়া হাটখোলা ব্রিজ হতে পারকোনা পৌরসভা বাসস্ট্যান্ড ভায়া কুঞ্জুবন সড়কে তিন হাজার ৫০০ মিটার চেইনেজে ৪২ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। ছিকুটিবাড়ী মাইকেল চেয়ারম্যানের বাড়ির সড়কে ৫৬০ মিটার চেইনেজে ১৮ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। রাধাগঞ্জ ইউপিসি-উত্তরপাড়া হাটখোলা-নাগরা বাজার সড়কে ০০ মিটার চেইনেজে ২৫ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। দেবগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পের সামনে ০০ মিটার চেইনেজে ৩০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। রাধাগঞ্জ ইউপিসি-ডগলাস হাইস্কুল-ভাঙ্গারহাট জিসি সড়কে ১০ মিটার চেইনেজে ৩৯ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। রাজৈর কোটালীপাড়া সড়ক হতে লুৎফর রহমান বাচ্চুর বাড়ি ছোট দিঘলিয়া জিপিএস সংযোগ সড়কে ০০ মিটার চেইনেজে ৩০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। কুশলা ইউপি হতে টুপুরিয়া আরঅ্যান্ডএইচ সড়কে দুই হাজার ৪৩০ মিটার চেইনেজে ৩৬ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। টুপুরিয়া আরঅ্যান্ডএইচ হতে কুশলা ইউপিসি ভায়া জামুলা সড়কে আট মিটার চেইনেজে ৩০ মিটার গার্ডার ব্রিজ। হরিণাহাটি ডিবি-হরিণাহাটি জিপিএস সড়কে ১০ মিটার চেইনেজে ৫১ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। সাদুল্যাপুর ইউপিসি হতে চলবল বাজার সড়ক (চেইনেজে ৮০০-ছয় হাজার ৩৪০ মিটার)। নাগরা আরএইচডি-বান্ধাবাড়ী-রামশীল-শশীকর জিসি সড়ক চেইনেজে পাঁচ হাজার ২০০-১৪ হাজার ৪০৫ মিটার প্রশস্ত ও শক্তিশালীকরণ। নাগরা বাজার-রামশীল ইউপি সড়ক চেইনেজে তিন হাজার ২০০-পাঁচ হাজার ৯৯০ মিটার প্রশস্ত ও শক্তিশালীকরণ। কদমবাড়ী-কালিগঞ্জ-গান্ধিয়াশুর জিসি সড়ক নির্মাণ চেইনেজে ০০-ছয় হাজার ২৫৬ মিটার। কোটালীপাড়া সদর ভূমি অফিসের সামনে আরঅ্যান্ডএইচ বিশারতবাড়ি পর্যন্ত সড়কে ০০ মিটার চেইনেজে ১৮ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। কাগডাঙ্গা চেয়ারম্যান বাড়ি হতে কাটাভিটা ভায়া এমএ সাইদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ সড়ক (চেইনেজে ০০-এক হাজার ৩২০ মিটার) ইউনিব্লক দ্বারা উন্নয়ন। চাটখালি ব্রিজ-মহিষডাঙ্গা ভায়া ফুলবাড়ি জিপিএস সড়ক নির্মাণ (চেইনেজে ০০-আট হাজার ১৬০ মিটার)। চিতশী জিপিএস কান্দিপাড়া ওয়াপদা বেড়িবাঁধ সড়ক নির্মাণ (চেইনেজে দুই হাজার ৫০০-১১ হাজার ১০০ মিটার)। আশুতিয়া শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন দাড়িয়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর। শুয়াগ্রাম ইউনিয়ন কৃষক সেবা কেন্দ্র। কেটালীপাড়া উপজেলা হেডকোয়ার্টার হতে ধারবাসাইলকান্দি সড়ক নির্মাণ (০০-১১ হাজার ৩৪৪ মিটার)।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্পগুলো হচ্ছে, কোটালীপাড়া উপজেলার আটাশীবাড়ী, তালপুকুরিয়া ও ধারাবাশাইল এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ও রামচন্দ্রপুর গ্রামে আধুনিক যান্ত্রিক কৃষির সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতি প্রকল্প।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, কোটালীপাড়া উপজেলার শুয়াগ্রাম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত চারতলা বিশিষ্ট আধুনিক একাডেমিক ভবন। শেখ হাসিনা আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের ১০০ আসনের নবনির্মিত ছাত্রী হোস্টেল ও কোটালীপাড়া এসএস ইনস্টিটিউশনের নবনির্মিত চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমরিয়া ইউনিয়নে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্প ও কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল ইউনিয়নে একটি রুরাল পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম।
কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ বাস্তবায়িত ভাঙ্গারহাট তালিমপুর-তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত শেখ রাসেল পাঠাগার প্রকল্প। গোপালগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃক বড়বাজারে নির্মিত অত্যাধুনিক বাণিজ্যিক ভবন ও স্যানিটারি ল্যান্ডফিল্ড। গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদ বাস্তবায়িত কোটালীপাড়ায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পৈত্রিক ভিটায় নির্মিত একটি মুক্তমঞ্চ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়িত কোটালীপাড়া উপজেলার লাখিরপাড় রমমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে বন্যা অশ্রয়ণকেন্দ্র। কোটালীপাড়া পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত পৌরসভা কিচেন মার্কেট।
এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণপূর্তের গোপালগঞ্জ জেলা তথ্য কমপ্লেক্সে, কোটালীপাড়া উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, এলজিইডি’র কোটালীপাড়া উপজেলায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর মুর্যাল নির্মাণ প্রকল্প, রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের ভাঙ্গারহাট বাজার উন্নয়ন প্রকল্প ও কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ কর্তৃক গৃহীত ১১টি ইউনিয়ন পরিষদে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ফলক স্থাপন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
এদিকে সকাল থেকে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জনসভা মাঠে জড়ো হন বিপুল সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনগণ।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে কোটালীপাড়াকে। সড়কগুলোতে নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য তোরণ ও দুই পাশে টাঙানো হয়েছে ডিজিটাল পোস্টার-ব্যানার।
জনসভা মাঠে তৈরি করা হয়েছে নৌকা আকৃতির বিশাল মঞ্চ। জনসভা মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ সদর, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় বাস্তবায়িত ৪৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
জনসভা শেষে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় যাবেন। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে বঙ্গবন্ধু ও ৭৫-এর ১৫ আগস্ট নিহত শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতে তিনি অংশ নেবেন।